বুধবারেও ৩ শিশুর মৃত্যু, হাসপাতাল পরিদর্শনে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন

গত কয়েকদিনে রাজ্যের বিসি রায় শিশু হাসপাতালে যেন শিশু মৃত্যু কোনওভাবেই রোখা সম্ভব হচ্ছে না। পরিসংখ্যান বলছে, শ্বাসকষ্টের সমস্যায় প্রত্যেক দিন গড়ে ৬-৭ জন করে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবারের পর বুধবারও শিশুমৃত্য়ুর ঘটনা ঘটল বাংলায়। বিসি রায় হাসপাতালে এক জন ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও ২ জন শিশুর মৃত্যু হয় বলেই সূত্রে খবর। বুধবারই বিসি রায় শিশু হাসপাতালে পরিদর্শনে আসেন রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ও সদস্য অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁরা এও জানান, হাসপাতালে চিকিৎসকও রয়েছেন প্রচুর, কোথাও একটি বেডে দুটি শিশুর থাকার মতো ঘটনা ঘটছে না। দুর্ব্যবহারের অভিযোগও সঠিক নয়। কেন রেফার রোগ বেশি এই ইস্যুতে কমিশনের বক্তব্য, যেহেতু আম জনতা মনে করছেন, এখানে চিকিৎসা পরিষেবা ভাল, তাই এখানেই নিয়ে আসছেন তাঁরা।

এদিকে কেন কলকাতার সরকারি হাসপাতালে এই হারে শিশুমৃত্যু তার পর্যালোচনা করতে গিয়ে চিকিৎসকদের কথাতেই উঠে আসছে ‘রেফার রোগ’ তত্ত্ব। মঙ্গলবারের একটি কেস স্টাডিও তার প্রমাণ। হুগলির বৈচি গ্রামের সায়ন পালকে দোলের দিনই আনা হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জানা যাচ্ছে, তাকে যখন আনা হয়েছিল, তখন পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। কার্যত মৃতপ্রায় অবস্থাতেই তাকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় বলে দাবি চিকিৎসকদের। জরুরি বিভাগেই তার মৃত্যু হয়। সায়নের ঘটনার পরই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়, কেন শিশুর শারীরিক অবস্থা একটু স্থিতিশীল না করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয় তা নিয়েই। এর আগে নবান্নে এই বিষয়টিই উল্লেখ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভবনের তরফেও ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বারবার নির্দেশিকায় বলা হয়, ‘শেষ মুহূর্তে রেফার নয়।’ এই নির্দেশিকা যাওয়ার পরও ছবিটা একটুও যে বদলায়নি তার প্রমাণ সায়ন পালের এই ঘটনা।

এদিকে চিকিৎসকদের একাংশও জানাচ্ছেন, ‘যেভাবে দেখা হচ্ছে শিশুমৃত্যুর হার, তাতে বলব, এমন নয় যে অনেক বেশি মৃত্যু। পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যে শিশুগুলির মৃত্যু হয়েছে, তাতে কেবল অ্যাডিনো ভাইরাস নয়, বাচ্চাগুলোর হয়তো আরও অনেক শারীরিক সমস্যা ছিল। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। বাচ্চা অসুস্থ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রাজ্যে ভাল পরিকাঠামো রয়েছে।’ পাশাপাশি এই ঘটনায় আরও এক তত্ত্ব সামনে আসে। কোভিডের সময় যেভাবে মাস্ক ব্যবহার করা হতো, এখন তা করা হচ্ছে না। এদিকে স্কুলগুলোও খুলে গিয়েছে। এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। এদিকে আবার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিশু হাসপাতালে যথেষ্ট বেডের অভাব রয়েছে। যেভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সাবধনতা নিতেই হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। আর সেই কারণেই সরকার ও স্বাস্থ্য দপ্তরকে আলাদা করে নির্দেশিকা জারি করতে হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − 5 =