চোখের সামনে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শয়ে শয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। শিশু থেকে মহিলা এমনকী সেনাবাহিনীর ছিন্নভিন্ন দেহ পড়েছিল রাস্তায়। তার মধ্যেই কিভ শহর থেকে আমাদের পালাতে হয়েছে। অবশেষে ১০ ঘণ্টার যাত্রা করে হাঙ্গেরি সীমানা দিয়ে ভারতে পৌঁছেছি। শনিবার রাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে মালদায় ফিরে এমন শিহরণ জাগানো অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ইংরেজবাজার থানার কাজীগ্রাম এলাকার চিকিৎসক পড়ুয়া সোহন মহালদার। দীর্ঘ দুই বছর পর ছেলেকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ বাবা-মা ।
শনিবার রাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে অবশেষে বাড়ি ফিরছেন মালদার ওই চিকিৎসক পড়ুয়া। এদিন রাতে শতাব্দি এক্সপ্রেস করে মালদা টাউন স্টেশনে নামে ইংরেজবাজার থানার কাজীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের নওদা বাজারের বাসিন্দা তথা ওই পড়ুয়া সোহন মহালদার। ছেলেকে কাছে পেয়ে আপ্লুত পরিবার। মালদা টাউন স্টেশনে তাকে জড়িয়ে ধরেন পাড়া-প্রতিবেশী থেকে পরিবারের লোকেরা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফেরায় ওই ডাক্তারি পড়ুয়া ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মন্টু ইসলাম। এই বিষয়ে ওই পড়ুয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের অভিজ্ঞতা এবং কিছু সাক্ষীর কথা তুলে ধরেন সংবাদমাধ্যমের কাছে।
সোহন মহালদার ইউক্রেনের জাফরোজিয়া স্টেট মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের পাঠরতা ছিল। সেই শহর থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিভ শহরের দূরত্ব মাত্র ছয় কিলোমিটার। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হোস্টেলের নিচে বাঙ্কার করে প্রায় ১০০ জন মিলে ঠাসাঠাসি করে থাকতেন। সাইরেন বাজলেই বাঙ্কারের ভেতর ঢুকে যেতে হত তাদের।
ওই চিকিৎসক পড়ুয়া সোহন হালদার বলেন, আমার সঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশের সহপাঠীরা ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার চারদিন পর যখন দেশে ফেরার চেষ্টা করি, তখন শত শত লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছি। হাঙ্গেরি সীমান্ত যেতেই ট্রেন ধরতে হয়েছিল। ১০ ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে ট্রেনে করে হাঙ্গেরি সীমান্তে পৌঁছেছি।
ওই চিকিৎসক পড়ুয়া আরো বলেন, হোস্টেল থেকে বাইরে বেড়িয়ে দেখতাম বন্দুকধারী সকলে ঘোরাঘুরি করছে। সেই সময়টা খুব ভয় লাগতো। মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে বাড়ি ফিরে আসতে পেরেছেন এটাই ভাগ্য। জীবনে যে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে আসতে পারব তা কখনোই ভাবতে পারেননি সোহন। রাস্তায় পড়ে থাকা হাজার হাজার মৃতদেহ টপকে প্রায় ৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। হোস্টেল থেকে কিভ শহরে সেই তবে সেখান থেকে ট্রেনে করে হাঙ্গেরি সীমান্তে পৌঁছেছিলাম।
অন্যদিকে এই বিষয় কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মন্টু ইসলাম বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় তার ভাই বাড়ি ফিরতে পেরেছে তাই মুখ্যমন্ত্রীকে আন্তরিক ভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন পরিবার।