ভারতীয় সংস্কৃতি এবং মাতৃভূমিকে যারা সম্মান করে তারাই হিন্দু: ডঃ মোহন ভাগবত

কলকাতা : রবিবার কলকাতায় তাঁর বক্তৃতায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সরসঙ্ঘচালক ডঃ মোহন ভাগবত সংঘের প্রতিষ্ঠা, উদ্দেশ্য এবং কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন যে, সংঘ সম্পর্কে মতামত প্রায়শই তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ছড়িয়ে পড়া ভ্রান্ত বর্ণনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। সংঘ নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যে, সংঘ সম্পর্কে মানুষের ধারণা যেন তথ্যের উপর ভিত্তি করে হয়, গুজব এবং ভ্রান্ত ধারণার উপর নয়।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, আরএসএস কোনও পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বা কারওর বিরোধিতা করার জন্য অথবা কারওর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য গড়ে ওঠেনি। সংঘ এইজন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যাতে বিশ্বব্যাপী ভারতের গৌরব প্রচার হয়| বিশ্বগুরু হওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া ভারতের সমাজ সেই স্তরে উন্নীত করার জন্য সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ডঃ ভাগবত বলেন যে, সংঘ কেবল হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করার জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি অন্য কারওর সঙ্গে বিরোধিতা করার জন্য নয়। শ্রী গুরুজির উক্তি উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, যদি পৃথিবীতে একজনও খ্রিস্টান বা মুসলমান না থাকত, তবুও হিন্দু সমাজের সংগঠিত করার প্রয়োজন থাকত, কারণ সমাজ অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত। সরসঙ্ঘচালক বলেন যে ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের ব্যর্থতার পর প্রশ্ন ওঠে যে, দক্ষ যোদ্ধা এবং বুদ্ধিমান হওয়া সত্ত্বেও মুষ্টিমেয় ব্রিটিশরা কীভাবে ভারত শাসন করতে পারে। সেই সময়ে, এটাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে কেবল স্বাধীনতা নয়, সামাজিক সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন যে, স্বামী বিবেকানন্দ এবং মহর্ষি দয়ানন্দ মূলত ভারতীয় সমাজকে তার পরিচয় স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করেছিলেন। এই সময়েই ডঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের মতো ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে। যিনি জন্মগত দেশপ্রেমিক ছিলেন| ডঃ ভাগবত বলেন যে, ডঃ হেডগেওয়ারের যখন ১১ বছর বয়স, সেইসময়ে তাঁর বাবা মা মারা যান। এর পরে তিনি চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করেছিলেন| তিনি মেধাবী ছিলেন। দেবী কালীর সামনে তিনি যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই অনুসারে তিনি ভারত মাতার উদ্দেশ্যে আজীবন তাঁর সেবা উৎসর্গ করেছিলেন। দশ বছর গভীর চিন্তাভাবনার পর ডঃ হেডগেওয়ার ১৯২৫ সালে বিজয়াদশমীতে সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের দুর্দশা এবং সমাজের দুর্বলতা দেখে ব্যথিত হয়ে সংঘের জন্ম হয়। এর লক্ষ্য হল সমগ্র হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করা।

সরসঙ্ঘচালক বলেন যে, সংঘের পদ্ধতি হল ব্যক্তি গঠনের মাধ্যমে কার্যকর্তাদের একটি দেশব্যাপী সংগঠন গড়ে তুলে সামাজিক জীবনে পরিবর্তন আনা। সংঘের শাখার অর্থ হল প্রতিদিন এক ঘন্টা সবকিছু ভুলে গিয়ে দেশ ও সমাজের কথা চিন্তা করা। ডঃ ভাগবত বলেন যে, হিন্দুধর্ম কোনও একটি উপাসনা পদ্ধতি, খাদ্য বা পোশাকের নাম নয়। হিন্দুধর্ম কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায় নয়, বরং এটি একটি প্রকৃতি। যে কেউ এই ভূমির সংস্কৃতি এবং মাতৃভূমিকে সম্মান করে সেই হিন্দু। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য খুঁজে পাওয়ার ধারণা চিরন্তন এবং হিন্দু প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, হিন্দু সমাজ বসুধৈব কুটুম্বকমের চেতনার সঙ্গে সকলের কল্যাণ কামনা করে। সংঘের লক্ষ্য হলো সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা| এর ভেতরে আলাদা, প্রভাবশালী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা নয়।

সরসঙ্ঘচালক বলেন যে, সংঘ কর্তৃক প্রশিক্ষিত স্বয়ংসেবকরা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছেন। যেখানেই নিঃস্বার্থভাবে ভালো কাজ করা হচ্ছে, সংঘ তা সমর্থন করে এবং সমাজের সঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − 1 =