বিক্ষিপ্ত অশান্তি, হাতাহাতিতে মিটল রাজ্যের তৃতীয় দফার নির্বাচন

রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হল শান্তিতেই। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ -সহ দেশের ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৯৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজ্যের চার আসনে মোট ভোট পড়েছে ৭৩.৯৩ শতাংশ। মালদহ উত্তর লোকসভায় ভোট পড়েছে ৭৩.৩০ শতাংশ। মালদহ দক্ষিণে ভোট পড়েছে ৭৩.৬৮ শতাংশ এবং জঙ্গিপুরে সবথেকে কম ভোট পড়েছে ৭২.১৩ শতাংশ। ওই সময়ের মধ্যে মুর্শিদাবাদে ভোট পড়েছে ৭৬.৪৯ শতাংশ। তৃতীয় দফার লোকসভা ভোটে বাংলায় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটের হার ৭৩.৯৩ শতাংশ।

পাশাপাশি, এদিন উপনির্বাচন রয়েছে ভগবানগোলাতেও। বিকেল পর্যন্ত সেখানে ভোটের হার ৭৩.৬৮ শতাংশ। সকাল থেকে ভোটকে ঘিরে বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমালের খবর মিলেছে। তবে এরাজ্যের ভোটে হিংসার চেনা ছবির তুলনায় তা নিতান্তই ফিকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমেছে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানোর সংখ্যাও। লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায় চার কেন্দ্র মিলিয়ে বিকেল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে মোট ৩৬১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। দলগত ভাবে অভিযোগ জমা পড়েছে ২১৭টি। যার মধ্যে সিপিএমের অভিযোগ সব থেকে বেশি, ১৫৩টি। কংগ্রেস ২৫টি, তৃণমূল ১৭টি এবং বিজেপি ১০টি নালিশ করেছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। সব কেন্দ্র মিলিয়ে ১০টি ঘটনার জন্য কমিশন রিপোর্ট তলব করেছে বলে রাজ্য নির্বাচন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি সাগরপাড়া হাই স্কুলের ১০ নম্বর বুথের মহিলা প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি সকাল থেকেই ভোট কর্মী এবং ভোটারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। ওয়েব কাস্টিং থেকে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তর ও নির্বাচন সদনের কর্তাদের নজরে আসার পরই তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আরো জানা গিয়েছে, ওই মহিলা প্রিসাইডিং অফিসার ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষিকা।

উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে এই নিয়ে দুজন প্রিসাইডিং অফিসারকে ওয়েব কাস্টিং ছবি দেখে সরিয়ে দেওয়া হলো। এর আগে প্রথম দফায় জলপাইগুড়িতে এক প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তৃতীয় দফার ভোটের সকালে সিপিএম এজেন্টকে মারধরের ঘটনায় সরব হয়েছিলেন মহম্মদ সেলিম। গোপীনাথপুরে ৩৬ নম্বর বুথে এসে ভুয়ো এজেন্টকে বের করে দিয়েছিলেন তিনি। এবার তাঁর বিরুদ্ধেই মারধরের অভিযোগ করল তৃণমূল কর্মীরা। ঘটনাটি লোচনপুর প্রাম পঞ্চায়েতের মোহনপুর ৩৯ নম্বর বুথের। আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীর নাম সারিকুল ইসলাম।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই নিজের কেন্দ্রে সক্রিয় থাকতে দেখা গিয়েছিল মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমকে। রানিনগর ৩৪ বুথে সিপিএমের এজেন্টকে মারধর করে বার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মার খেয়ে কলাবাগানে লুকিয়ে ছিলেন ওই এজেন্ট। পরে সেলিম এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। মুর্শিদাবাদের গোপীনাথপুরে ৩৬ নম্বর বুথে এক ভুয়ো এজেন্টকেও হাতেনাতে ধরে ফেলেন বাম প্রার্থী। এর পর গ্রামের ভিতর ঘুরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। ভোটারদের আশ্বস্ত করেন ভোট দিতে যাওয়ার জন্য। সেলিম কিছুটা যেতেই তাঁকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠে। তৃণমূল কর্মীদের একাংশ এই স্লোগান দেন। শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সেলিমকে ধাক্কাধাক্কি করতেও দেখা যায়। অন্য দিকে, হিটলার সরকার নামে এলাকার এক তৃণমূল কর্মীর অভিযোগ, সেলিম তাঁকে মারধর করেছেন।
ভোটের সকালে উত্তপ্ত হতে দেখা গিয়েছিল মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রও। এই লোকসভার অধীনে ইংরেজবাজার পুর এলাকায় বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। আঙুল উঁচিয়ে তেড়ে যেতে দেখা যায় শ্রীরূপাকে। পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন তৃণমূল কর্মীরা। সব মিলিয়ে সাতসকালেই উত্তেজনা মালদহে।

প্রসঙ্গত, তৃতীয় দফায় যে ৯৩টি আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের চারটির পাশাপাশি গুজরাতের ২৫, কর্নাটকের ১৪, মহারাষ্ট্রের ১১, উত্তরপ্রদেশের ১০, মধ্যপ্রদেশের ন’টি, ছত্তিশগড়ের সাতটি, বিহারের পাঁচটি, অসমের চারটি, গোয়ার দু’টি, দাদরা ও নগর হাভেলির একটি এবং দমন ও দিউয়ের একটি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে।

বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশে ভোটের হার
১. বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের ৯৩ আসনে ভোট পড়ল প্রায় ৬০.১৯ শতাংশ।
২. ভোটের হারের নিরিখে এগিয়ে অসম। সেখান বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭৪.৮৬ শতাংশ।

রাজ্যে ৪ আসনে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভোটের হার
১. মোট ভোট পড়েছে ৭৩. ৯৩ শতাংশ
২. মালদহ উত্তরে ৭৩. ৩০ শতাংশ
৩. মালদহ দক্ষিণে ৭৩. ৬৮ শতাংশ
৪. জঙ্গিপুরে ৭২. ১৩ শতাংশ
৫. মুর্শিদাবাদে ৭৬. ৪৯ শতাংশ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 4 =