সব থাকতেও বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই! আবাসিকদের মন খারাপ দূর করতে আদ্রার মণিপুর বৃদ্ধাশ্রমে প্রথমবার দুর্গাপুজো

নিজস্ব প্রতিবেদন, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ার রেলশহর আদ্রার মণিপুর বৃদ্ধাশ্রমে এই বছর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে শারদোৎসব। একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গে নিয়ে যারা বেঁচে আছেন, বৃদ্ধাশ্রমের সেই সব আবাসিকরাও এবার পাবে শারদীয়া উৎসবের স্বাদ। তাঁদেরও মুখে এবার ফুটবে হাসি। এই বিশেষ উদ্যোগ শুধু একটি উৎসব নয়, বরং জীবনের শেষ অধ্যায়ে পৌঁছে যাওয়া মানুষগুলোর জীবনে জ্বলে উঠবে নতুন করে আলো। এই ধরনের উদ্যোগগুলি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবীণদের জীবনে আনন্দ ও নতুন উদ্যম নিয়ে আসে, এবং তাদের নিঃসঙ্গ জীবনে একটু স্বস্তি যোগায়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যাঁরা অবহেলিত ছিল এবার তাঁদের মুখেও ফুটবে উৎসবের হাসি।
পুজো এলেই বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দারা তাঁদের ফেলে আসা সোনালি অতীত ও পারিবারিক স্মৃতিচারণ করেন। অনেক স্মৃতি সুখের হলেও, কিছু এমন স্মৃতি আছে যা তাঁদের মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। আদ্রার মণিপুর বৃদ্ধাশ্রম জুড়ে এখন সাজ সাজ রব। আবাসিকদের তৎপরতায় পুরোদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার চেহারায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে ব্যস্ততা। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা আবাসিকদের মধ্যে সত্য মাহাতো, পুটুবালা পাণ্ডা, যাদব মাহাতোরা জানান, ‘পরিবারের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিরা কবেই আমাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সারা বছর ভুলে থাকলেও পুজোর সময়টাতে তাদের কথা বেশি করে মনে পড়ে। বৃদ্ধাশ্রমে মায়ের আগমন সেই শূন্যতাকে কিছুটা হলেও পূরণ করবে।’ এক আবাসিকের কথায়, ‘পুজোর কটা দিন মন ভালো রাখতে হোম থেকে নবকুমারবাবু প্রতিবছর গাড়ি করে আমাদের বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু অনেক পুজো মণ্ডপে আমাদের দেখে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিতেন। আমাদের ঘৃণার চোখে দেখা হত। মনে খুব দুঃখ পেতাম। এবার আর আমরা কোথাও যাব না। এবার মা আমাদের বাড়িতেই আসছেন। মা কে নিয়েই পুজোর দিনগুলো আমরা সব কিছু ছেড়ে ভুলে থাকব।’
এই উদ্যোগ মণিপুর বৃদ্ধাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক নবকুমার দাসের। তাঁর এই মানবিক চিন্তার সাথে যুক্ত হয়েছেন গোটা মণিপুর গ্রামবাসী। আর তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতায় বৃদ্ধাশ্রমে এবার প্রথমবার মাতৃ আরাধনার সূচনা হবে। বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের নিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন শুধুমাত্র একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আর এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছেন হোমের সাধারণ সম্পাদক নবকুমার দাস। তিনি জানান, ‘আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল এখানে মায়ের পুজোর আয়োজন করার। অবশেষে সেই স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। অবশ্য এই আনন্দের পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন বেহালার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারা পুজোর দুটো দিনের পুজোর সমস্ত খরচ নিজেরা বহন করে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন বলে কথা দিয়েছেন।’ তাদের এই মানবিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান নবকুমারবাবু। তিনি জানান, এই হোমে মোট ২৮ জন আবাসিক থাকেন। যারা পরিবার-পরিজন হারিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের একাকিত্ব দূর করতে পুজো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ™ুজোর দিনগুলিতে গল্প-আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া করে আবাসিকরা আনন্দ খুঁজে পান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 9 =