চিত্ত মাহাতো
আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়ানো মেঘমালা আর কাশফুলের সারির ওপর উড়ে চলা বলাকারা যেমন শারদীয়ার বার্তা দিচ্ছে, তেমনি ঢাকি পাড়ায় ঢ্যাম কুড় কুড় ঢাক বাদ্যের বোলেও ধ্বনিত হচ্ছে—মা আসছেন। পুজোর গন্ধ ছড়িয়ে পড়তেই ঢাকিদের পাড়ায় ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। দুই কাঠির তাল এক করতে বেলপাহাড়ি ব্লকের জয়পুর কুচলাপাহাড়ি ও সাহাড়ির ঢাকিরা চরম ব্যস্ত। বদলে যাওয়া সময়ের অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিন যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে ঢাকে নতুন ধরনের বোল তুলতে যার পরনাই ব্যস্ত শিল্পীরা। জয়পুরের ঢাকি পাঁড়ু কালিন্দির কথায়, তাদের এই প্রস্তুতিতে মনমরা ছেলেমেয়ে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকে। কারণ পুজোর সময় কাজকর্ম সেরে ছুটি নিয়ে আর পাঁচজন বাঙালি যখন বাড়ি ফিরে পরিবার পরিজনদের সঙ্গে আনন্দে পুজোর দিনগুলি কাটান তখন ঢাকিদের পরিবার-পরিজনদের ছেড়ে পয়সা উপার্জনের আশায় ঢাক বাজাতে যেতে হয় বাইরে। কারণ ঢাকিদের রোজগারের মূল উৎস বলতে এই শারদীয় পূজা। পুজোর ক’দিন মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক বাজিয়ে যা রোজগার হয় তাতে কিছুদিন সংসার চলে যায়। তাই বছরের এই কটা দিনের জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকে ঢাকিরা। প্রতিবেশী বাঙালিরা যখন পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতে থাকবেন তখন ঢাকিরা তাদের পরিবার পরিজনদের ছেড়ে দূর দূরান্তের পূজামণ্ডপে ঢাকে ঢ্যাম কুড়া কুড় বোল তোলায় ব্যস্ত থাকবে। ভাঙা মন নিয়ে বাড়ির লোকেরা থাকবে উদাসীনতা ও একাকীত্ব আঁকড়ে ধরে। বেলপাহাড়ি ব্লকের জঙ্গলমহলের অন্যান্য ঢাকিরা জানান, দেশের সমগ্র উৎসব প্রেমী মানুষদের মতো তাদের এবং তাদের পরিবারের লোকজনদের সেভাবে পুজো দেখা হয় না। দুটো পয়সার টানে তাদের বাইরে চলে যেতে হয়। তাই কি করে এত বড় পুজোয় হাসি ফুটবে তাদের পরিবারে। পুজোর প্রাকমুহূর্তে ঢাকের প্রস্তুতি বোলে সেই শূন্যতায় ঘুরপাক খাচ্ছে জঙ্গলমহলের ঢাকিদের পরিবারগুলোতে।