নয়া ফরমান যোগী আদিত্যনাথের সরকারের। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর যাচাই করবে সরকার। সরকারের ভাবমূর্তি খণ্ডন হচ্ছে এমন কোনও ধরণের ‘নেগেটিভ নিউজ’ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন করার নির্দেশ দেওয়া হল প্রশাসনিক আধিকারিকদের। অর্থাৎ, যোগী সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেওয়া হল, সরকার যদি মনে করে প্রকাশিত কোনও খবর ভিত্তিহীন এবং সেখানে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা হয়নি, তবে জবাবদিহি চাওয়া হবে সংবাদমাধ্যমের থেকে।
সূত্রে খবর, গত ১৬ অগাস্ট উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিব একটি চিঠি দেন ১৮ জন ডিভিশনাল কমিশনার এবং ৭৫ জন জেলাশাসককে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘যদি দেখা যায় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কোনও খবর সরকার এবং প্রশাসনের ভাবমূর্তি খণ্ডন করছে তবে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের থেকে জবাবদিহি চাইতে পারবে জেলা প্রশাসন তথা রাজ্য সরকার।’
এ ছাড়াও যোগী রাজ্যের মুখ্য সচিব তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমগুলি খুঁটিয়ে দেখবে তথ্য দফতর। ফ্যাক্ট চেক করা হবে প্রকাশিত খবরগুলির। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে এমন খবর প্রকাশিত হলে তা কিসের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে বা তথ্যই বা কোথা থেকে মিলল সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে প্রশাসনকে।’
সূত্রে এ খবরও মিলছে, সরকারের তরফে একটি ইন্টিগ্রেটেড গ্রিভান্স রিড্রেসাল সিস্টেম প্রস্তুত করা হবে। যেখানে প্রতিটি জেলার বিষয়ে প্রকাশিত মিডিয়া রিপোর্টগুলির ‘নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট’ জানাতে পারবেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। সেই তথ্য পৌঁছবে ডিভিশনাল কমিশনার এবং জেলাশাসকের কাছে। যে দফতর সম্পর্কে ‘নেগেটিভ নিউজ’ প্রকাশিত হবে, সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকরা সেগুলি খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। বিস্তারিত রিপোর্টও দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। পাশাপাশি ইন্টিগ্রেটেড গ্রিভান্স রিড্রেসাল সিস্টেম পোর্টালে সাপ্তাহিক মিডিয়া রিপোর্টগুলি আপলোড করতে হবে জেলাশাসককে। তথ্য ও জনসংযোগ দফতরে প্রতি সপ্তাহে সেই রিপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হবে। রিপোর্ট যাবে মুখ্য সচিবের দফতরেও।
এই প্রসঙ্গে যোগী আদিত্যনাথের দফতরের এক সিনিয়র আধিকারিক জানান, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ফ্যাক্ট চেকিং। সম্প্রতি সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যা ভাবমূর্তি নষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট। সেগুলি কতটা যথাযথ তা প্রমাণিত হওয়ার আগেই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়ে যাচ্ছে। বারবার আঙুল তোলা হচ্ছে উত্তর প্রদেশ সরকারের দিকে। ফলে এমন প্রতিটি খবর খুঁটিয়ে দেখে তথ্য় যাচাই করার প্রয়োজনীতা বেড়েছে।’ এই নয়া নির্দেশিকা সম্পর্কে তথ্য ও জনসংযোগ দফতরের ডিরেক্টর শিশির জানান, ‘এমনটা নয় প্রতিটি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এটা কেবলমাত্র তথ্য যাচাই করার জন্যই করা হচ্ছে। কোনও একটি নির্দিষ্ট ইস্যুর ভিত্তিতে সরকারকে নিয়ে প্রকাশিত মিডিয়া রিপোর্টগুলির ফ্যাক্ট চেক করা হবে।’
তবে যোগী আদিত্যনাথের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার পর থেকেই দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মিডিয়া, যাকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়, তার হাত-পা বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, এমনটাই অভিযোগ বিজেপি বিরোধী শিবিরের। একইসঙ্গে বিজেপি সরকার মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব করতে উদ্যত বলেই মন্তব্য করছেন দেশের সাংবাদিক মহলের অধিকাংশও।