মহেশ্বর চক্রবর্তী
আকাশে বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ। সোনালি রোদের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে নীল মেঘের আড়ালে। মা দুর্গা আসছে। পুরুষ ঢাকিদের পাশাপাশি সমান তালে ঢাকের বোল তুলতে দেখা যায় হুগলির আরামবাগ (Arambag) থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সালেপুরের মহিলা ঢাকিদের। একেবারে দ্বারকেশ্বর নদীর পাড়েই মহিলা ঢাকি পাড়া। পুজোর মরশুমে মহড়ায় মেতেছেন মহিলা ঢাকিরা। পুজো এলেই মুখে হাসি ফোটে তাদের। পর পর দুই বছর করোনা সংকটে সেই ভাবে ডাক না পাওয়ায় আর্থিক সংকটে ভুগছে তারা। তবে এই বছর আশায় বুক বেঁধেছে তারা। জানা গিয়েছে, দ্বারকেশ্বর নদীর পাড় ঘেঁষে সালেরপুরের ঢাকি পাড়া। প্রায় ১৫টি পরিবারের মহিলারা ঢাক বাজানোর সঙ্গে যুক্ত। তবে এই বছর উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে গেলেও এখনও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর বায়না সেই ভাবে না আসায় হতাশায় দিন কাটছে তাদের। কিভাবে দুর্গাপুজোয় ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফোটাবে তারা, দুশ্চিন্তায় অস্থির তারা। জব কার্ডে কাজ করে কোনও রকমে চলছে সংসার। এমনই জানালেন মহিলা ঢাকি চম্পা মল্লিক, নমিতা দোলুই, শ্যামলী হাঁসদা সহ অন্যান্যরা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই মহিলা ঢাকিরা বাজাতে যান। এ বার কি আদৌ ঢাক বাজিয়ে রোজগার কিছু হবে? আদৌ কি ঢাকে কাঠি পড়বে? এই প্রশ্নগুলো গভীর হলেও করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় আশা বুক বাঁধে তারা। দ্বারকেশ্বর নদীর পাড়ে মহড়ায় মেতে ওঠেন তারা। ডাক আসবেই। তবেই তো ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফুটবে। টাকা রোজগার হলে সংসারের হাল ফিরবে। পাশাপাশি এই সমস্ত মহিলা ঢাকিরা শিল্পী হিসাবে সরকারি ভাতার দাবি তোলেন।
আশা সব সময়ই মানুষের জীবনকে গতিপ্রাপ্ত করে। দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে যেমন কাশ ফুল জানান দিচ্ছে পুজো আসছে তেমনি মহিলা ঢাকি পাড়ার ঢাকের বোলও আশা জাগাচ্ছে তাদের, বায়না নিশ্চয়ই হবে। হাসি ফুটবে ছেলে মেয়েদের মুখে। এই আশাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছেন আরামবাগের মহিলা ঢাকি পাড়ার পরিবারগুলো। তবে এই মহিলা ঢাকিদের ঢাক বাজানোর দক্ষতা অসাধারণ। ছয় থেকে সাতটি স্কিলকে সামনে রেখে ঢাকের তালে বোল তোলে তারা। দেবী দুর্গার আরাধনার সময় অসাধারণ ঢাকের বোল যেন মন্ত্র মুগ্ধ করে সবাইকে। তবে এই মহিলা ঢাকি পাড়ার মানুষগুলো কেমন আছেন, জানতে চাইলে ছল ছলে চোখে মহিলা ঢাকিদের প্রশিক্ষক দিলীপ কুমার দাস বলেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ। বায়না আসছে না। আশা করি দেবী মার কৃপায় এই পরিবারগুলোকে বাঁচাতে বায়না আসবে। ছেলে মেয়েরা হাসিমুখে মণ্ডপে ঠাকুর দর্শন করতে পারবে। সবমিলিয়ে আরামবাগের এই ছোট জনপদের মহিলা ঢাকিদের পরিস্থিতি শোচনীয় হলেও এবার পুজোয় নিশ্চয়ই ডাক আসবে। এমনটাই প্রার্থনা সকলের।