ঘন কুয়াশার মধ্যে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ করছে হুগলির গাছিরা

মহেশ্বর চক্রবর্তী

আবহান বাংলার এই ছবিটি বলে দেয় শীতের সকাল। সাত সকালে গাছিরা ছুটছেন খেজুর রস পাড়তে। এটি বাঙালির আদি চিত্র। সময়ের আবর্তনের ভেতর দিয়ে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। কিন্তু বাঙালির এই ঐতিহ্য টুকু রয়ে গেছে। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে সব কিছু যেন মিলে গেছে। শীত আসা মানেই সুমিষ্ট খেজুরের রস আর গুড়ের মিষ্টি আভা ছড়িয়ে পড়ে। আর এই কাজটি করছেন হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বর বিঘাটি ধীতাড়া পশ্চিম পাড়ার এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে গোঘাট, খানাকুল, আরামবাগের নদীবাঁধ এলাকার বেশ কয়েক জন বাসিন্দা। খেজুর গাছে আগেরদিন রস সংগ্রহ করতে টানিয়ে দেওয়া হয় মাটির কলস, সে গুলি থেকে রস সংগ্রহ করে আবার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ ওই হাঁড়িগুলি আগুনে পুড়িয়ে আবার গাছে টাঙিয়ে দেয় তারা। অদ্ভুত এদের কারুকার্য। তরতর করে গাছে উঠে রস সহ কলস নামিয়ে আনে তারা। সেই রস বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কাঠের উনুনে জ্বালিয়ে দিয়ে গুড় তৈরি করে। সময় লাগে এক ঘণ্টায় বেশি। চাষি আর দোকানদাররা খেজুর রসের গুড় কিনে নিয়ে যায়। যার দাম আড়াইশো টাকা কেজি। এখন খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিবিসি খালের ধারে প্রায় ৪০ টির মতো গাছ এদের আয়ত্ত্বের মধ্যে রয়েছে। এই বিষয়ে এক গাছিয়া জানায়, যখন ভোরবেলায় সকলে লেপ মুড়ি দিয়ে সকলে ঘুমায়। সেই সময় ভোররাতে খেজুর রস সংগ্রহ করতে যেতে হয়। বহু কষ্ট করে এই খেজুর রস সংগ্রহ করতে হয়। আমরা সারা বছর এই কাজ করতে পারি না। বাকি সময় অসহায়ভাবে দিন কাটে। শীতের সময় টুকুতে খেজুর গুড় বিক্রি করে কিছু পয়সা পাই। ছেলে মেয়েদের মুখে অন্ন তুলে দিই। জানা গেছে, অন্য সময় তারা নাকি ডাব বেঁচে সংসার চালায়। আর এই কাজে অবশ্যই সহযোগিতা করে তাদের পরিবার। এই বিষয়ে খানাকুলের এক গৃহবধূ জানায়, গরিবের সংসার। খেজুর রস সংগ্রহ করেই সংসার চলছে। খেজুর রস তৈরির কাজে স্বামীকে সাহায্য করি। তাদের বহু বছর ধরে চলে আসছে এই কাজ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 9 =