প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর সময় এসেছে, ওএমআর শিট মামলায় জানালেন ক্ষুব্ধ বিচারপতি

ওএমআর শিট মামলায় সিবিআই-এর রিপোর্ট দেখে এবার চরম পদক্ষেপ করার কথা শোনা গেল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায়। মঙ্গলবারও ফের সিবিআই-এর অফিসারদের বিরুদ্ধে অশুভ আঁতাতের অভিযোগও তুলতে শোনা যায় বিচারপতিকে। আর তারই রেশ ধরে এবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সিবিআই-এর সম্পর্কে নালিশ করার ভাবনা বিচারপতির। প্রসঙ্গত, ওএমআর শিট মামলায় মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট দেয় সিবিআই।

এই রিপোর্ট দেখে বিচারপতি জানান, ‘রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে সিবিআই নিজেই কালপ্রিটদের ঢাকার চেষ্টা করছে।’ এরই রেশ ধরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, ‘প্রধান মন্ত্রীর দফতরে পাঠাব। বলব কিছুই করছে না সিবিআই।’ এরপরই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ভর্ৎসনার সুরে বলেন, ‘আপনার অফিসাররা শিশু নয়, ওঁরা জানেন কী করতে হয়।’

এরই সঙ্গে বিচারপতির সংযোজন, ‘আমার মনে আছে বেশ কিছু জায়গায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় সই করেন। মিথ্যে রিপোর্ট।’ কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসেটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্যের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘আপনার অফিসারদের এর আগেও বার বার বলেছি। এবার সেই সময় এসে গিয়েছে।’ সঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এও বলেন, ‘সিবিআই-এর সবাই নয়, তবে কিছু জন হাতে হাত ধরার চেষ্টা করছেন দোষীদের।’ এরই রেশ ধরে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি আইএএস প্রমোদকুমাক মিশ্রকে চিঠি দিয়ে তিনি এই বিষয়ে অভিযোগ জানাবেন। প্রত্যুত্তরে সিবিআই এর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানান,  গত বছর জুলাই মাসের সাত তারিখ ডিজিটাইসড ডেটা এস বসু রায় কোম্পানি থেকে নেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় এরপর? এস বসু কোম্পানির কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি?’ উত্তরে সিবিআই জানায়, ‘সিস্টেম এনালিস্ট পার্থ সেন।  তাঁকে তিনবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের সিস্টেম অনুযায়ী ওএমআর রাখা যায় না। তাঁকে আবার ডেকেছে সিবিআই।’

প্রসঙ্গত, গত বছর জুলাইয়ের সাত তারিখের পর  চলতি বছরের মার্চের তিন তারিখ এস বসু  রায়ের আইও সোমনাথ বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  গত বছরের অগাস্ট মাসের ১৩ তারিখ  গৌতম মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয় বলেও আদালতে জানায় সিবিআই। তখন বিচারপতি জানতে চান, কীভাবে মৃত্যু হয় গৌতম মুখোপাধ্যায়ের? সিবিআই-এর তরফ থেকে জানানো হয়, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। উল্লেখ্য, এদিন সিবিআই-এর রিপোর্ট দেখে কখনও আইটি বিশেষজ্ঞ তো কখনও আবার এনআইএ এক্সপার্টের খোঁজ করেন বিচারপতি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে, সিবিআই-এর রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিচারপতি। কেস ডায়েরি দেখে বিচারপতি বলেন, ‘সিবিআই অনেক প্রশ্ন করেছে। অথচ যে প্রশ্ন গুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেগুলিই রাখা হয়নি।’  এরপরই সিবিআইয়ের তরফ থেকে জানানো হয়,  জিজ্ঞাসাবাদের  পর কারোরই সই নেওয়া হয়নি। আর তা শুনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হতে দেখা যায় বিচারপতিকে। এরপরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় , ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, এক গুচ্ছ বোকারা সিবিআইতে আছেন। আমার মনে হচ্ছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করা হচ্ছে।’ এরপরই সিবিআই-এর তরফ থেকে আর্জি জানানো হয় আর একবার সুযোগ দেওয়ার জন্য। এরপরই বিচারপতি জানান, এবার সিবিআই ডিরেক্টরকে পাঠিয়ে জানতে হবে কেন এই সব প্রশ্ন নেই তা নিয়ে। এরই রেশ ধরে বিচারপতি এও জানান, ‘সিবিআই তদন্তে একেবারেই খুশি নই। ক্লু পাওয়া গেছিল অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের পর। কিন্তু সেগুলি নিয়ে কেউ কাজ করেনি।’ এরপরই বিচারপতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, ‘এই সব অফিসারদের গ্রেফতার করা উচিত। তবে সঙ্গে এও জানান,  বিশ্বাস করি সিবিআইয়ে ব্রিলিয়ান্ট অফিসার আছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 18 =