বাঁকুড়ার শিল্পকে বাঁচাতে পুজোর থিম কাঁসা-পিতল

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: শেষ শব্দ? এমন ভাবেই এবার শারদ উৎসবে তুলে ধরা হয়েছে বাঁকুড়ার কাঁসা-পিতল শিল্পকে। হারিয়ে যেতে চলেছে শিল্পীদের তপ্ত কাঁসা-পিতলের মণ্ড পিটিয়ে পাত বা সামগ্রী তৈরি করার শধ।
বাঁকুড়ার কাঁসা-পিতল শিল্প অতি প্রাচীন। একসময় অযোধ্যা ও কেঞ্জাকুড়ার মতো এই জেলার বিভিন্ন গ্রামে কাঁসা-পিতল শিল্পীদের ছিল দাপট। এই সব গ্রাম ছিল আর্থিক দিক থেকে অনেক উন্নত। আজ সেই দিন আর নেই। অতীতে কাঁসা-পিতলের থালা, বাটি, গ্লাস ও কলসির ব্যবহারের ব্যাপক প্রচলন ছিল। এখন সেই জায়গা দখল করেছে স্টিলের বাসনপত্র। এই সব সামগ্রীর ব্যবহার অনেকটাই পিছু হটে হয়ে দাঁড়িয়েছে বনেদি বাড়ির আভিজাত্যের প্রতীক।
যদিও সেই জায়গাটাও দখল করে নিচ্ছে চিনামাটি ও ফাইবার সামগ্রীতে। এতেই চরম সঙ্কটে পড়েছে জেলার কাঁসাপিতল শিল্পীরা। অযোধ্যার প্রায় ২০০ শিল্পী পরিবার। শিল্পীদের দাবি, কাঁসা-পিতল সামগ্রীর ব্যবহার প্রায় সব বাড়িতে উঠে গিয়েছে। এখন শুধু বিয়ে ও মুখেভাতের মতো পারিবারিক শুভ কাজে কাঁসা-পিতল সামগ্রীর ব্যবহার সীমাবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছেন শিল্পীরা।
তাঁদের আরও দাবি, কাঁসা-পিতলের বিভিন্ন সামগ্রীর টুকরো তাঁরা আনেন। সেগুলিকে আগুনে গলিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিশ্রুত করে পিটিয়ে নতুন সামগ্রী তৈরির পাত করা হয়। এটা অত্যন্ত শ্রম ও খরচ সাপেক্ষ। একাজের জন্য প্রতি কেজি ১৫০ টাকা পারিশ্রমিক পান তাঁরা। একাজে তাঁদের খরচ হয় ১২০ টাকার মতো। অন্যদিকে এক-একটি শিল্পী বা কর্মকার পরিবার মাসে মহাজনদের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ কুইন্ট্যাল পুরাতন কাঁসা-পিতল সামগ্রী ভাঙা বা টুকরো পাওয়া যেত।
বর্তমানে গড়ে ৫০ – ৬০ কেজি মাল মহাজনদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। এতে মাসের অধিকাংশ সময় তাঁদের কর্মহীন হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। তাই নতুন করে কেউ এই পেশায় আসছেন না। উলটে অনেকেই এই পেশা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এই শিল্প ঘিরে অনেকে বিকল্প আয়ে যুক্ত রয়েছেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে অনেকে পুরাতন ভাঙা কাঁসা-পিতলের সামগ্রী সংগ্রহ করে মহাজন বা শিল্পীদের কাছে সরবরাহ করতেন। এখন সেই পেশাও হারিয়ে গিয়েছে কাঁসা-পিতল সামগ্রীর ব্যবহার কমে যাওয়ায়।
প্রকৃতপক্ষে এই শিল্প মরতে বসেছে। এই শিল্পের কাঁসা-পিতল পেটানোর শধ হারিয়ে যাচ্ছে। শেষ শধ আশঙ্কায় রয়েছে শিল্পীরা। ঢাকুরিয়া সর্বজনীন বাঁকুড়ার কাঁসা-পিতল শিল্পীদের এই করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরেছিল তাদের পূজার থিম হিসাবে। তাদের বক্তব্য, উদ্দেশ্য ছিল এই শিল্প ও শিল্পীদের বাঁচাতে জনমত গঠন করা। সরকার যেন এই শিল্প বাঁচাতে উদ্যোগী হয়। বাঁকুড়ার ৪০- ৫০ হাজার শিল্পীর জীবিকা রক্ষা পাবে। তাঁরা কাঁসা-পিতল শিল্পের শেষ শধ শুনতে চান না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 1 =