জঙ্গল থেকে এক নাবালিকার মৃতদেহ উদ্ধারকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কালিয়াচক থানার আকন্দবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উজিরপুর এলাকায়। স্থানীয় গ্রামবাসীরা মৃতদেহটি দেখে অনুমান করছে যে, ওই নাবালিকাকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এমনকী কালিয়াগঞ্জের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে মালদার কালিয়াচকের উজিরপুর এলাকায়, এমন অভিযোগ করেছেন একাংশ গ্রামবাসীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই নাবালিকার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে ওই এলাকায় তদন্তে পৌঁছয় কালিয়াচকের এসডিপিও অম্ভব জৈন-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ ছড়ানোর আগেই তড়িঘড়ি নাবালিকার মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
প্রাথমিক তদন্তের পর কালিয়াচকের এসডিপিও অম্ভব জৈন জানিয়েছেন, কি কারণে ওই নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরেই পরিষ্কার করে বলা যাবে। তবে গণধর্ষণ হয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি কালিয়াচকের এসডিপিও। পুরো বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ বলে জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ বছর বয়সি ওই নাবালিকার বাড়ি পুরাতন মালদা থানার নবাবগঞ্জ এলাকায়। সে দশম শ্রেণিতে পাঠরত ছিল। পুরাতন মালদা থেকে কালিয়াচকের উজিরপুর গ্রামের দূরত্ব প্রায়ই ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার। কি কারণে ওই নাবালিকা এই দুর্গম এলাকায় গেল সে ব্যাপারেও পরিষ্কার করে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এদিন সকালে উজিরপুর গ্রামের আমবাগান দিয়ে কিছু মানুষ কাজে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তারা বাগানের একটি ঝোপের মধ্যে চুরিদার পড়া অবস্থায় ওই নাবালিকার দেহ পড়ে থাকতে দেখে। এরপরই খবর পেয়ে তদন্তে পৌঁছয় কালিয়াচক থানার পুলিশ।
এদিকে বাড়ির মেয়ের রহস্যজনক অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। মৃত নাবালিকার এক দিদি জানিয়েছেন, সোমবার বিকালে তার বোনের মোবাইল একটি ফোন আসে। তার বোনের সঙ্গে ইংরেজবাজার থানার মহদিপুর এলাকার এক যুবকের মেলামেশা ছিল। সেই যুবকই ফোন করে তাকে দেখা করার জন্য বলে। দেখা না করলে ওই যুবক বিষ খেয়ে আত্মহত্যার কথা পর্যন্ত বলে হুমকি দেয় তার বোনকে। এরপরই এদিন সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ২০০ টাকা চুরি করে তার বোন পালিয়ে যায়। এরপরই মঙ্গলবার সকালে লোকমুখে বোনের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা জানতে পারি।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, তাদের বাড়ির মেয়েকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। আর এই ঘটনার পিছনে প্রেমিক সহ তার দলবল জড়িত থাকতে পারে।
পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, যে এলাকায় ওই নাবালিকার মৃতদেহটি উদ্ধার হয়েছে সেই উজিরপুর গ্রাম থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। শর্টকাট রুট ধরে উজিরপুর এলাকা থেকে মহদিপুর যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে। তবে কেন ওই জায়গাতে নাবালিকা মেয়েটি গেল, সে ব্যাপারেও পরিষ্কার করে জানাতে পারেনি তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা।
মৃত নাবালিকার মা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় মেয়ে আমাকে ফোন করে বলেছিল সে মাসির বাড়ি গিয়েছে। রাতে ফিরবে না। এরপরই ফোনটা কেটে যায়। অনেকবার ওকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনওরকম ভাবে যোগাযোগ করতে পারে নি। সকালে বিষয়টি জানার পরেই মেয়ের মৃতদেহ শনাক্ত করি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকুক না কেন, তাদের ফাঁসির দাবি করেছেন মৃত নাবালিকার পরিবার।
পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, ওই ছাত্রীর মৃতদেহটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে রিপোর্ট হাতে আসার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বলা যাবে। পাশাপাশি মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।