আটলান্টিকের অতলেই তলিয়ে গেল টাইটানের ধ্বংসের রহস্য!

অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে মৃত্যু এভাবে আঁকড়ে ধরবে ভাবতে পারেননি ডুবোযান টাইটানের পাঁচ যাত্রী। আটলান্টিকের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ১৬০০ ফুট দূরে পাওয়া গিয়েছে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীর দাবি, সমুদ্রের গভীরে একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে ডুবোযানটি। ২২ ফুটের ডুবোযানটির পাঁচটি টুকরো হয়ে গিয়েছে। সেগুলিরও খোঁজ মিলেছে। কিন্তু পাঁচ অভিযাত্রীর দেহের কোনও হদিস মেলেনি। তাঁদের দেহ উদ্ধারের সম্ভাবনাও ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে বলেও জানিয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। তবে ঠিক কী কারণে ডুবোজাহাজটির এই পরিণতি হল তা এখনও রহস্য।

চার অভিযাত্রী এক চালকের মধ্যে ছিলেন পাক ধনকুবের শাহজাদা দাউদ ও তাঁর ১৯ বছরের পুত্র। নিজের ইচ্ছা না থাকলেও ফাদার্স ডে-তে বাবাকে খুশি করতে চেয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ঘুরে দেখতে সাবমেরিনে চড়েছিলেন ওই যুবক। বাবার সঙ্গেই সমুদ্রের অতলে তলিয়ে গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তরুণ সুলেমান দাউদ।

যাত্রা শুরুর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না টাইটানের সঙ্গে। ১৯ জুন আমেরিকা এবং কানাডা টাইটানের খোঁজে নামে। সমুদ্রের ৪০০০ মিটার গভীরে শব্দ নিরীক্ষণ যন্ত্র পাঠানো হয়। সিএনএন এবং রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে ৩০ মিনিট অন্তর বেশ কয়েকটি জোর শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। কোথা থেকে শব্দ আসছিল সেটি চিহ্নিত করে ২১ জুন দূরনিয়ন্ত্রিত একটি সমুদ্রযানকে জলের গভীরে পাঠানো হয়। ৯৬ ঘণ্টার মতো অক্সিজেন ছিল টাইটানে। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তিন দিন কেটে গিয়েছিল, ফলে অক্সিজেনের পরিমাণও কমছিল। তাই দ্রুত উদ্ধারের জন্য আরও দু’টি দূরনিয়ন্ত্রিত সমুদ্রযান পাঠানো হয়। কিন্তু তখনও কোনও হদিস পাওয়া যায়নি টাইটানের। ২২ জুন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টে ৪৮ মিনিটে আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী জানায়, টাইটানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।

আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে জোরালো শব্দ চিহ্নিত করা গিয়েছিল, সেই সময়েই কিছু একটা ঘটেছিল টাইটানের সঙ্গে। অনুমান করা হচ্ছে, জলের প্রবল চাপে ডুবোযানটি দুমড়ে গিয়েছিল। এই ধরনের ডুবোযান কার্বন ফাইবার এবং টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়। যদি তাতে কোনও ত্রুটি থাকে বা কোনও ভাবে চিড় ধরে তা হলে দুমড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ভাবেই হয়তো শেষের মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে ডুবোযানের। ওই জলের চাপে কোনও মানুষেরই বেঁচে থাকার কথা নয়। উপরন্তু, সামুদ্রিক প্রাণীর আক্রমণও দেহ না পাওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − seven =