চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-৩-এর নির্ধারিত সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভারতবাসী প্রত্যেকেই। এই মুহূর্তে চন্দ্রযান-৩-এর ‘বিক্রম’ ল্যান্ডারে একটি ‘স্যালভেজ মোড’ রয়েছে। শেষ মুহূর্তে কোনও রকম ত্রুটি-বিচ্যুতি হলেও মহাকাশযানটিকে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণে সাহায্য করবে এটি। একইসঙ্গে ইসরোর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ‘চন্দ্রযান-২-এর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চন্দ্রযান-৩-এ আনা হয়েছে একাধিক পরিবর্তন। চন্দ্রযান-৩ যে চাঁদের বুকে সফল অবতরণ করবেই সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’ সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, চন্দ্রযান-৩ ল্যান্ডারের তোলা চাঁদের সাম্প্রতিক ছবিগুলো কিছু বিশিষ্ট গর্ত চিহ্নিত করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় অনাবিষ্কৃত চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সফল অবতরণের আগে বিক্রম ল্যান্ডারটিকে একটি নিরাপদ অবতরণ এলাকা খুঁজে পেতে ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলোর সাহায্যে নিচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী রাধাকান্ত পাধি জানান, ‘২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২-এর সফল অবতরণ নিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেটিও যে ভেঙে পড়তে পারে তার কারণ সে সময় অনুধাবন করতে পারেননি তাঁরা। তবে এই মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর ব্যর্থতার কারণগুলি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে যে কোনও অবস্থাতেই এবার চন্দ্রযান-৩ চাঁদের বুকে অবতরণ করবে। সেই রকম ভাবেই নির্মিত হয়েছে চন্দ্রযান-৩।’ একইসঙ্গে চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণ নিয়ে আশা প্রকাশ করেন রাধাকান্ত পাধি। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর তাঁর কণ্ঠস্বর। তিনি জানান, ‘ছয়টি সিগমা বাউন্ড” এর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, তাই এটি আরও শক্তিশালী। বিক্রম ল্যান্ডার অবতরণের স্থান অনুসন্ধানের জন্য বিপদ সনাক্তকরণের কাজ করতে সক্ষম। ‘বিক্রম’ ল্যান্ডারে দুটি অন-বোর্ড কম্পিউটার রয়েছে। চন্দ্রযান-২-এ শুধুমাত্র একটি অন-বোর্ড কম্পিউটার ছিল। আমি ৯৯.৯ শতাংশ আত্মবিশ্বাসী যে ‘বিক্রম’ল্য়ান্ডারটি প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করবে।’ এখানে বলে রাখা শ্রেয়, চন্দ্রযান-২ ও চন্দ্রযান-৩ দুই মিশনের সঙ্গেই জড়িত। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের মহাকাশ বিভাগের চন্দ্রযান-৩ মিশনে অবদান রয়েছে যথেষ্ট।
চন্দ্রযান-৩ নিয়েও স্পেস ফিজিক্স ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর কে রাজীবের গলাতেও একই সুর। তিনি অবশ্য জানান, ‘অবতরণের আগের সময়কালটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল। কারণ এই পর্যায়ে ‘পাওয়ার ডিসেন্ট’-এর ধাপ পেরোতে হবে। তারপর আসবে নেভিগেশনের বিষয়টি। এরপরই চাঁদের বুকে নরম ভাবে অবতরণ করবে চন্দ্রযান-৩। সুতরাং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। তবে সফল অবতরণের পরেই আমরা আসল ফলটা হাতে পাব। নিরাপদ অবতরণের জন্য় আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। অবতরণের পর রোভারটি চন্দ্রপৃষ্ঠে খনিজের সন্ধান করবে। প্রথমবার ভারত চাঁদের রোগোলিথ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করতে চলেছে। চন্দ্রযান-২-এর অরবিটারটি এখনও কাজ করে চলেছে ও তথ্য সংগ্রহ করছে।’ এদিকে রবিবার ইসরোর তরফে জানানো হয়, চন্দ্রযান-৩ বুধবার, ২৩ অগাস্ট চাঁদের পৃষ্ঠে সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে অবতরণ করবে।