শিক্ষক নিয়োগ এবং পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত একঙ্গে হওয়া উচিত কি না প্রশ্ন আদালতের

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা ও পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত একই সঙ্গে হওয়া উচিত কি না তা নিয়ে শুনানি চলাকালীন প্রশ্ন তুলতে দেখা গেল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীকে।
প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের আবেদনের শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। এদিনের শুনানির সময় বিচারপতি জানান, ‘এখন অয়ন শীলের ঘটনায় পুর-নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগের ওএমআর শিট এবং পুরসভায় নিয়োগের ওএমআর শিট অয়ন শীলের সংস্থা থেকেই গিয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে। আর এখানেই বিচারতি তপোব্রত চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘তাহলে, এই দুই দুর্নীতি কি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়? এই দুই দুর্নীতির তদন্ত কি একত্রে হওয়া উচিত নয়? এই পরিস্থিতিতে এই দুই দুর্নীতিকে কি আদৌ আলাদা করা সম্ভব? এই দুই দুর্নীতিকে যদি আলাদা আলাদা জায়গায় দাঁড় করাতে হয় তাহলে সেটা কিভাবে সম্ভব হবে? যদি আলাদা করা সম্ভব হয় তখনই এই প্রশ্ন উঠতে পারে যে তাহলে পুর-নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত কে করবে? রাজ্য না সিবিআই?’
প্রসঙ্গত, গত ১৯ মার্চ ইডি-র জালে ধরা পড়ে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অয়ন শীল। এরপর গত ২০ এবং ২১ মার্চ অয়ন শীলের চুঁচুড়ার বাড়ি ও সল্টলেকের অফিস ও ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় ইডি। সেখানেই উদ্ধার হয় পুর নিয়োগের ওএমআর শিট৷ সেই তথ্য আদালতে পেশ করে ইডি।
এই মামলার শুনানি চলছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। ইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। এরপরে পুর নিয়োগ কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্ট যায় রাজ্য। সেখানে, হাইকোর্টের নির্দেশে ৭ দিনের অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। এরপরে মামলা সরে যায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে। তিনিও সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল রাখেন। শুধু তাই নয়, এদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ ছিল যে, আর্থিক দুর্নীতির সব দিক খতিয়ে দেখবে আদালত। নতুন করে কোনও দিক উন্মোচিত হলে সেটাও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় আদালত। এখানে বলে রখা শ্রেয়, এই তদন্তের নির্দেশের উপর সুপ্রিম কোর্ট কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। এরপর ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চ এবং বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আপিল মামলা রিলিজ করে। এরপরে প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দিষ্ট করে রাজ্যের আপিল মামলার শুনানি জন্য। সেই মামলারই শুনানিতেই বৃহস্পতিবার প্রথমার্ধে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এই প্রশ্নগুলি করেন রাজ্যকে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবারই পুর নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে রাজ্যের ১৪টি পুরসভায় তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআইয়ের একাধিক দল। এমনকি, সল্টলেকে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের অফিস বিল্ডিংয়েও যান তদন্তকারীরা। সেই বিল্ডিংয়ের ৫ তলায় দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালান তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =