অসমের কারবি আংলঙে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করে উন্নয়নের বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

‘এক সময় এই অঞ্চলে বোমা আর গুলির শব্দে মানুষের কান ঝালাপালা হয়ে গিয়েছিল। আজ এখানে উল্লাস ও হাততালির শব্দ প্ৰতিধ্বনী হচ্ছে। তাই-তো অসমের ২৩ জেলা-সহ উত্তরপূর্বের কয়েকটি রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চল থেকে আফস্পা (AFSPA) প্রত্যাহার করা হয়েছে। চেষ্টা চলছে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের। এটাই সব-কা সাথ, সব-কা বিকাশ ও সব-কা বিশ্বাসের ফসল।’ আজ অসমের পাহাড়ি জেলা কারবি আংলঙের ডিফুতে আয়োজিত ‘শান্তি, ঐক্য ও উন্নয়ন সমাবেশ’-এ ভাষণ দিতে গিয়ে এমনটাই বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)।

মঞ্চে আসার পথে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে উপস্থিত উচ্ছ্বসিত মানুষ ও শিশুরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, তাঁকে একটু স্পর্শ করতে বাঁধ ভেঙেছেন তরুণ-তরুণীরা। প্রধানমন্ত্রীও যথাসম্ভব তাঁদের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। এরই মধ্যে প্রবীণাদের দেখে এগিয়ে গিয়ে তাঁদের পদস্পর্শ করে প্রণতি জানাতে কার্পণ্য করেননি মোদি। এছাড়া বহু যুবক-যুবতী-বলিকা মোদির সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন।

কারবি আংলং জেলার ডিফুতে বোতাম টিপে অমৃত সরোবর প্ৰকল্প উদ্বোধন করেন তিনি। এর অধীনে প্রায় ১,১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ ২,৯৮৫-এর বেশি অমৃত সরোবর তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সারা দেশে জল সংরক্ষণের জন্য আজাদি-কি অমৃত মহোৎসবের অঙ্গ হিসেবে প্রতিটি জেলায় ৭৫টি জলাশয়ের বিকাশ ও পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভেটেরিনারি কলেজ (ডিফু), ডিগ্রি কলেজ (পশ্চিম কারবি আংলং) এবং কৃষি কলেজ (কোলঙ্গা, পশ্চিম কারবি আংলং)-এরও শিলান্যাস করেছেন আজ। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি এই সেক্টরে দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের জন্য নতুন সুযোগ প্রদান করবে।

সভামঞ্চে ওঠার পর প্রধানমন্ত্রীকে কারবি জনজাতীয় পোশাক পরিয়ে সংবর্ধনা জানান মুখ্যমন্ত্রী ও কারবি স্বশাসিত পরিষদের সিইএম। এর পর যথাসময় ভাষণ দিতে উঠেন তিনি। ভাষণ দিতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘যখনই আমি আপনাদের মধ্যে আসার সুযোগ পাই, তখন আপনাদের ভালোবাসা, আশীর্বাদ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করি। একে ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতো মনে হয়। আজ এখানে অনেক মানুষ এসেছেন, তাঁরা তাঁদের পরম্পরাগত পোশাকও পরেছেন। এর জন্য আমি আপনাদের আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’

মঞ্চে অসমের রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখি, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, মন্ত্ৰী পীযূষ হাজরিকা-সহ কয়েকজন মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, কারবি স্বশাসিত পরিষদের প্রধান প্রমুখকে পাশে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী ডাবল ইঞ্জিন সরকারের প্রশংসা করেছেন। বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, বিরাট আউটরিচের উৎকৃষ্ট স্থল এই অঞ্চল। বলেন, আজ অসমে ২,৬০০-এর বেশি অমৃত সরোবর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সরোবর নির্মাণ সম্পূর্ণরূপে মানুষের অংশগ্রহণের উপর ভিত্তি করে। উপজাতীয় সমাজে এ জাতীয় সারোবরগুলির একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। এটি কেবল গ্রামগুলিতে জলের মজুত তৈরি করবে না বরং তাঁদের আয়ের উৎসও তৈরি করবে। মোদী বলেন, দেশের উন্নয়ন এবং শহর ও গ্রামের উন্নয়নের জন্য রাজ্যের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা, স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি ও সঠিকভাবে সেগুলি বাস্তবায়ন করা হলে গ্রামের সঠিক উন্নয়ন সম্ভব।

শান্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত আট বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৭৫ শতাংশ সহিংসতা কমেছে। কয়েক দশক পর নাগাল্যান্ড, অসম এবং মণিপুরের বেশ কয়েকটি অঞ্চল থেকে আফসপা (সশস্ত্র বাহিনী-বিশেষ ক্ষমতা আইন) প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্ৰীয় সরকার চেষ্টা করছে, গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের। মোদি আরও বলেন, অসমে স্থায়ী শান্তি এবং দ্রুত উন্নয়নের প্রত্যাবর্তনে বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের প্রভাব স্পষ্ট দেখছেন তিনি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কারবি আংলঙের বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থী সংগঠন শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে মূলস্রোতে ফিরে এসেছে। আত্মসমর্পণকারীদের কর্মসংস্থানের জন্যও ভালো কাজ চলছে। এছাড়া ২০২০ সালে সম্পাদিত বড়ো চুক্তি স্থায়ী শান্তির জন্য নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। অসমের পাশাপাশি ত্রিপুরায়ও শান্তি ফিরেছে। ত্রিপুরায় এনএলএফটিও শান্তি চেয়ে মূলস্রোতে ফিরেছে। প্রায় আড়াই দশকের ব্রু শরণার্থী সমস্যাও মিটে গিয়েছে।

তিনি বলেন, আজ সব-কা সাথ, সব-কা বিকাশের চেতনার বলে সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে। অসম ও মেঘালয়ের মধ্যে সীমাবিবাদ সংক্ৰান্ত মীমাংসা চুক্তি সম্পাদনে অন্যান্য বিষয়গুলিকেও উৎসাহিত করবে। এটি সমগ্র অঞ্চলের উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করবে, বলেন প্ৰধানমন্ত্ৰী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার এই অমৃতকালে কারবি আংলংও শান্তি ও উন্নয়নের একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আর আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। গত কয়েক দশকে আমরা যে উন্নয়ন করতে পারিনি, তা পূরণ করতে আগামী কয়েক বছরে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ বলেন, ২০১৪ সাল থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সমস্যা কমছে, মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে। আজ যখন কেউ অসমের উপজাতি এলাকায় আসেন, উত্তরপূর্বের অন্যান্য রাজ্যে যান, তখন পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখে ভালও লাগে, বলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 6 =