কলকাতা: পুলিশের নাম শুনলেই ইদানীং ভূরি ভূরি অভিযোগ, গজগজানি শুনতে পাওয়া যায় আম জনতার মুখে। তবে এবার কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক গার্ডের এক ইন্সপেক্টর উদ্ধারকর্তার ভূমিকায়। জনবহুল ব্রেবোর্ণ রোড থেরে গ্রিন করিডর তৈরি করে গাড়িতে গুরুতর অসুস্থ হওয়া পড়া এক ব্যক্তিকে সরকারি গাড়িতে হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলেন তিনি। আমজনতা দেখল পুলিশের মানবিক মুখ ও দায়িত্ববোধ।
জানা গিয়েছে, স্ত্রীকে নিয়ে গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিলেন পাইকপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বনাথ দাস। ব্রেবোর্ন রোডের উড়ালপুলে উঠতেই ঘটে বিপত্তি। অসম্ভব বুকে ব্যথা অনুভব করেন বিশ্বনাথবাবু। যা দেখে ভয় পেয়ে যান তাঁর স্ত্রী। সাহায্যের জন্য ছোটাছুটি শুরু করেন। সেই সময় ব্রেবোর্ন রোড এলাকা চত্বরে ডিউটিতে ছিলেন হাওড়া ব্রিজের ট্রাফিক গার্ডের ইনস্পেক্টর শৌভিক চক্রবর্তী। তাঁর কাছে খবর যায় ব্রেবোর্ন রোডের উড়ালপুলে এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খবর পেয়েই বাইক নিয়ে সেখানে গিয়ে শৌভিক দেখেন, উড়ালপুলের মাঝখানে একটি গাড়ি দাঁড় করানো আছে। আর একজন মহিলা উদ্ভ্রান্তের মতো এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছেন। শৌভিকবাবু ওই মহিলাকে আশ্বস্ত করেন। তারপর বিশ্বনাথবাবুকে দেখে বুঝতে পারেন, তাঁর শরীরের অবস্থা ভাল নয়।
এদিকে, কলকাতার রাস্তার বিশাল ট্রাফিক পেরিয়ে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তখন শৌভিকবাবু ঠিক করেন গ্রিন করিডর করে বিশ্বনাথবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ততক্ষণে খবর চলে গেছে মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে। কিন্তু ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স, ট্যাক্সি কোনওটাই পাওয়া যায়নি। এদিকে সময় যত যাচ্ছিল ততই বিশ্বনাথবাবুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। তখন সরকারি গাড়ি করেই তড়িঘড়ি তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে দেন শৌভিক। ব্রেবোর্ন রোড থেকে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত গ্রিন করিডরের ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি গাড়ির আগে আগে নিজের বাইকে চেপে হাসপাতালে যান শৌভিকবাবু। বিকেলের ব্যস্ত সময়ে মাত্র ৭ মিনিটে হাসপাতালে রোগী সমেত গাড়িটি পৌঁছে যায়। তারপর বিশ্বনাথবাবুকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করার ব্যবস্থাও করে দেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বিশ্বনাথবাবু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল রয়েছেন। আগের তুলনায় তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভাল। হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে অক্সিজেন ও নেবুলাইজার দেওয়া হয়। ইসিজিও করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি করা গেছে বলে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বিশ্বনাথ বাবুকে। মৃত্যুর মুখ থেকে বিশ্বনাথবাবুকে ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর স্ত্রী ও হাসপাতালের চিকিৎসক সকলেই অকুণ্ঠ প্রশংসা করছেন কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক গার্ডের ইনস্পেক্টর শৌভিক চক্রবর্তীর।