চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। করল। যা গোটা দেশের গর্ব। তবে ৬১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারতের এই ‘মুন মিশন’ সফল হলেও এর থেকে সাধারণ মানুষ কী লাভ পাবেন এখন তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। এই প্রসঙ্গে ইসরোর তরফ থেকে জানানো হয়, চন্দ্রযান-৩ কেবল জল ও মূল্যবান খনিজ খুঁজে পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, কৃষিক্ষেত্র থেকে সমগ্র অর্থনীতির উপর বিশেষ প্রভাব রয়েছে এই চন্দ্রযানের। এই ‘মুন -মিশন’ থেকে কী কী সুবিধা মিলবে তা জানিয়েছে ইসরো।
সেখানে বলা হয়েছে, মহাকাশ গবেষণায় সহায়তা- চন্দ্রযান-৩ -র সাফল্য এমন অনেক নতুন তথ্য দিতে পারবে, যা মহাকাশের অনেক রহস্য সমাধান করতে সাহায্য করবে। অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে, চাঁদে জল ও বরফের পাশাপাশি ইউরেনিয়াম, প্ল্যাটিনাম, সোনা-সহ অনেক ধরনের খনিজ রয়েছে। চন্দ্রযান-৩-র রোভার আগামী ১৪ দিনের জন্য সেখানে এই ধরনের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করবে। সেখানকার ছবি পাঠাবে। তার থেকেই চাঁদের খনিজ, জল সম্পর্কে ধারণা অনেকটা স্পষ্ট হবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
এমনকী কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতেও এর প্রভাব পড়বে বলেও জানাচ্ছে ইসরো। কারণ, চন্দ্রযান-৩ এর সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। যেমন প্রাইভেট স্পেস সেক্টরে ভারতের আধিপত্য বাড়বে। এর ফলে মহাকাশ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কর্মরত প্রতিষ্ঠানগুলির চাহিদা বাড়বে। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও বাড়ছে।
শুধু তাই নয়, দেশের অনেক বেসরকারি কোম্পানি মহাকাশ বিজ্ঞান খাতের সঙ্গে যুক্ত। চন্দ্রযান-৩ -র সাফল্যের পর এই সমস্ত কোম্পানির শেয়ারের রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে। যেমন, গোদরেজ অ্যারোস্পেস, লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো (এলএন্ডটি), হিমসন ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিরামিকস চন্দ্রযান-৩ মিশনের সাঙ্গে যুক্ত। এই সংস্থাগুলির তৈরি সরঞ্জামগুলি চন্দ্রযান-৩- মিশনে ব্যবহার করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে।
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, চন্দ্রযান ৩-র সফট ল্যান্ডিংয়ের পর গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, এলএন্ডটি, টাটা স্টিল এবং হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্সের শেয়ার রেকর্ড লাভ দেখেছে। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (এইচএএল) শেয়ার ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪,১৩৮.৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এ ছাড়া ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস, প্যারাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস টেকনোলজিস এবং সেন্টাম ইলেকট্রনিক্সের শেয়ার বেড়েছে। যা দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধির সহায়ক।
এছাড়াও কৃষিক্ষেত্রে বড় প্রভাব পড়বে ভারতের মতো কৃষি প্রধান দেশে। উত্তর ভারতে অবস্থিত ইসরোর একমাত্র আঞ্চলিক অ্যাকাডেমিক সেন্টার ফর স্পেস-এর প্রধান এবং এনআইটি কুরুক্ষেত্রের গবেষণা ও উন্নয়নের ডিন অধ্যাপক ড. ব্রহ্মজিৎ সিং জানান, ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ এবং চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যকে ভারতের সাফল্য হিসাবে দেখা উচিত। কারণ মহাকাশে ভারত যত শক্তিশালী হবে, ততই কৃষিখাতে বিশেষ সুবিধা আসবে। বর্তমানে মাটি পরীক্ষা করে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদির কাজ চলছে। এআই-এমএল এখন মাটি পরীক্ষায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দেশের কৃষিক্ষেত্রের অগ্রগতির সঙ্গে সংযুক্ত। চন্দ্রযান-৩ থেকে চাঁদের মাটি ও জলবায়ু সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে, তার পরোক্ষ প্রভাব আগামী দিনে কৃষিক্ষেত্রে পড়তে পারে বলে আশাবাদী তিনি।
এরই পাশাপাশি বৃহস্পতিবার, চন্দ্রবিজয়ের পর দিন তাঁদের পরবর্তী অভিযান সম্পর্কে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান এস সোমনাথ জানান, তাঁদের প্রথম সৌর মিশন সেপ্টেম্বর মাসেই লঞ্চ করার জন্য প্রস্তুত করা হবে। সূর্যের নামেই প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে ‘আদিত্য’। সেপ্টেম্বরে লঞ্চ করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে মিশন আদিত্য-কে। কাজ চলছে গগনযানেরও।’ প্রসঙ্গত ইসরো-র প্রথম ম্যানড মিশন বা মহাকাশচারীদের নিয়ে অভিযান হতে চলেছে ‘গগনযান’। ইসরো প্রধান জানান ২০২৫ সাল নাগাদ মহাকাশে যেতে চলেছে গগনযান। অভিযানের প্রারম্ভিক ধাপ সম্পর্কে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের শেষেই জানানো হবে ইসরোর পক্ষ থেকে। কিন্তু কেন চাঁদের দক্ষিণ মেরুকেই বেছে নেওয়া হল অবতরণের জন্য এ প্রসঙ্গে ইসরো প্রধান সোমনাথ জানান, ভবিষ্যতে সেখানে মনুষ্যবসতি তৈরির সম্ভাবনা আছে।