রবি শাস্ত্রীর মতো আগ্রাসী কোচ বলে দিয়েছেন, অজিদের পাল্টা দাও। সেই স্ট্র্যাটেজি মাথায় রেখে গাব্বার ছক সাজাতে শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় দল। পারথে দুরন্ত পারফরম করলেও দিন-রাতের টেস্টে ভরাডুবি হয়েছে। মূলত তিনটে দিক নিয়ে চলছে ময়নাতদন্ত। এক, রোহিতের ত্রুটিপূর্ণ ক্যাপ্টেন্সি। বিশেষ করে বোলিং বদলের ক্ষেত্রে। দুই, প্রতিপক্ষকে মাপতে পারেনি ভারতীয় দল। বিশেষ করে ট্রাভিস হেডের ক্ষেত্রে। তিন, ভারতীয় ব্যাটাররা গোলাপি বলের মুখে পড়লেই ভেঙে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বিরাট ও রোহিতের ক্ষেত্রে। এই তিনটে দিক আমূল পাল্টে গাব্বায় চ্যালেঞ্জ দেওয়ার কাজটা শুরু করে দিল ভারত।
মাত্র আড়াই দিনে শেষ হয়ে গিয়েছে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় টেস্ট। ব্রিসবেন এখনও যায়নি ভারত। গাব্বায় পা রাখার আগেই অ্যাডিলেডেই প্রস্তুতিতে নেমে পড়ল ভারতীয় টিম। দু’ঘণ্টার সেশনে তারকা সকলেই ব্যাটিং করলেন। ওই নেট সেশন দেখেই মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে, কোন পথে এগোতে চাইছে ভারত। গাব্বায় ফিরতে না পারলে সিরিজে পিছিয়ে পড়বে রোহিতের দল। এমনিতেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবলে তিনে নেমে গিয়েছে ভারত। ফাইনালে পৌঁছতে হলে ৪-১ সিরিজ জিততে হবে। গাব্বায় ভারতের সামনে শেষ সুযোগ। হয় জেতো, না হয় ফাইনাল ভুলে যাও। এই মোডেই পুরো ব্যাপারটা দেখা হচ্ছে। আর তাই ঘষামাজার কাজটা প্রবল ভাবে শুরু করে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটাররা।
দুটো প্রশ্ন এখন ভারতীয় ক্রিকেটের আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক, রোহিত নামবেন কোন পজিশনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিত আবার ওপেনই করুন। মিডল অর্ডারে তিনি নেমে ব্যর্থ হওয়া মানে চাপটা আর পরের দিকে কেউই সামলাতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে লোকেশ রাহুল যদি রোহিতের জায়গা ছয় বা পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেন, তাতে টিম ভরসা পাবে। শুরুতে পর পর উইকেট পড়লেও তিনি সামলে দিতে পারবেন। দ্বিতীয় নতুন বলটাও খেলে দিতে পারবেন। এর উল্টো মতও আছে। প্রাক্তনদের মতে, ওপেনিংয়ে রদবদলে না যাওয়াই ভালো। মাত্র একটাই টেস্টে ব্যর্থ হয়েছেন রাহুল। সে দিক থেকে দেখলে যশস্বীও রান পাননি। রাহুল গাব্বায় ওপেন করলে শুরু থেকেই শক্ত খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে ভারত। যুক্তি যখন দু’দিকেই আছে, তখন রোহিত কী করবেন, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। নেটে যা দেখা গিয়েছে, তাতে কিন্তু রোহিত কোনও ভাবে রাহুলকে ওপেনিং থকে সরানোর পক্ষপাতী নন। তিনি পাঁচ বা ছয়েই ব্যাট করতে পারেন গাব্বায়।
আরও একটা প্রশ্ন থাকছে, বিরাট কেন বারবার স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরছেন। তাঁর ফুটওয়ার্ক নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফল হতে গেলে ব্যাকফুট শক্তপোক্ত করতে হবে, তা বিরাটকে বোঝানোর দরকার নেই। অস্ট্রেলিয়ার গতিশীল মাঠে তিনি যথেষ্ট সফল। একাধিক সেঞ্চুরির মালিক। পারথে, এই সফরের শুরুতেই সেঞ্চুরি করেছেন। বিরাট নেটে ব্যাকফুটে মন দিয়েছেন। যাতে অজি পেসারদের বিরুদ্ধে স্লিপে ক্যাচ না যায়। সেই সঙ্গে ফ্রন্টফুটেও যত্নশীল হয়েছেন। ভারতকে যদি পাল্টা দিতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে, তা হলে এক-দু’জনকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। সে কথা মাথায় থাকছে বিরাটেরও।
যে প্রশ্ন সরাসরি না উঠলেও ঘুরেফিরে আসছে; অস্ট্রেলিয়া সফরই কি শেষ বিরাট, রোহিতের মতো দুই তারকার? বিরাটের ততটা না হলরেও রোহিতের ক্ষেত্রে কিন্তু চাপ বাড়ছে। ক্যাপ্টেন হিসেবে টানা চারটে টেস্ট হেরেছেন। যা কিন্তু নির্বাচকরা ভালো ভাবে নিচ্ছেন না। তার উপর তাঁর ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে তৈরি হচ্ছে সংশয়। সে সব কাটিয়ে কি গাব্বায় আলো জ্বালাতে পারবেন রোহিত?