মনোনয়ন দাখিল পর্ব শেষ হতে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে আসছে ঝামেলার খবর। এর মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগ, বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর চাপ। আর এই অভিযোগ যাতে রাজ্যপালের কাছে সরাসরি জানানো যায় তার জন্য খোলা হয়েছে হেল্প লাইন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিস রুম’। রাজভবনের থেকে জানানো হয়েছে, এইরকমই অশান্তির খবর থাকলে, কোনও প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল অভিযোগ জানাতে চাইলে এই পিস রুমে অভিযোগ জানাতে পারেন। ইমেল, ফোনে জানানো যাবে অভিযোগ। বঙ্গে এই প্রথম যেখানে রাজভবন আলাদা করে ভোটের সময় সাহায্য কক্ষ খোলা হল।
এই পিস রুম খোলার পর থেকে বঙ্গ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে বিতর্ক। শাসক দলের সাংসদ শান্তনু সেন এই ‘পিস রুম’ সম্পর্কে জানান, ‘নির্বাচন কমিশনের আওতায় এখন সবকিছু। আদর্শ আচরণ বিধি বলবৎ আছে। নির্বাচন আচরণ বিধির ঊর্ধ্বে কেউ নন, স্বয়ং রাজ্যপালও নন। সুতরাং এই সময় এটা কতটা করা যায় আমার জানা নেই। রাজ্যপাল অতি উৎসাহী হয়ে যেভাবে এ সমস্ত কাজকর্ম করছেন। এদিকে এত বড় রেল দুর্ঘটনা ঘটল, এই উৎসাহ তো দেখা গেল না। এত মানুষের প্রাণ বিপন্ন হল, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছুটে গেলেন। তখন কোথায় ছিলেন উনি? সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে ওনার উচিত, নিজের এক্তিয়ারে থেকে প্রশাসনিক প্রধান ও নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা।’ প্রায় একই সুর রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর গলাতেও। স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, ‘রাজ্যপালের কোনও অধিকারই নেই এটা করার। উনি একজন মনোনীত ব্যক্তি। সংবিধানগত ভাবে ওঁনার যে অধিকার, রাজ্য মন্ত্রিসভার সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁকে পদক্ষেপ করতে হয়। কিন্তু বিজেপি অনৈতিকভাবে অবিজেপি রাজ্যে রাজ্যপালকে ব্যবহার করছে।‘ এদিকে রাজভবনের এই পদক্ষেপে কতটা আইনগত ভিত্তি রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রর্তী। বলেন, ‘এটার আইনগত ভিত্তি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা জরুরি। সম্ভবত নেই। রাজ্যপালের কাজ এটা নয়। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের যা দায়িত্ব, সেই আইনশৃঙ্খলা ও সেই সংক্রান্ত বিষয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা রাজভবনের দায়িত্ব না।‘
যদিও বিজেপির তরফ থেকে রাজভবনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। ‘পিস রুম’ সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘যা শুনছি হেল্পলাইন চালু হতেই প্রচুর অভিযোগ ইতিমধ্যেই এসেছে। বাড়িতে ভাঙচুর, মনোনয়ন জমা দিতে না পারা, ছেলেমেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো অভিযোগ এসেছে বলে শুনেছি।’ তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ‘পিস রুম’-এর এই পদক্ষেপকে কটাক্ষ করে জানান, ‘শান্তি ভবন শান্তি ভবনেই থাকবে। অশান্তি মেটানোর কোনও ব্যবস্থা হবে না। রাজভবনে একটা শান্তিভবন খুললাম, এটা কোনও অ্যাকশন নয়। কিছুই হবে না।‘ পাশাপাশি অধীর রঞ্জন এ প্রশ্নও তোলেন, ‘রাজ্যপালকে মানে এই সরকার?’