অযোধ্যা পাহাড়ের বুনো হাতির দল জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের নাজেহাল করে তুলেছে। হাতির তাণ্ডবে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা। সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ আদিবাসীরা। হাতিদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে আগে যে নির্দিষ্ট করিডোর ছিল আজ তা বনভূমি বেদখল করে জনবসতি এবং হোমস্টে ইত্যাদি গড়ে ওঠার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে জঙ্গলের নির্দিষ্ট গতিপথ ছেড়ে সমতলেও দাপাদাপি শুরু করেছে হাতির দল। যাতে খেতের ফসল ঘরবাড়ি রক্ষা করার পাশাপাশি হাতির আক্রমণ থেকে প্রাণে বেঁচে থাকাটাই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাতিদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি মানুষের ওপর আক্রমণের ধারাও পাল্টেছে। কোনওভাবেই বুঝতে না দিয়ে জনপদের রাস্তার পাশে ঝোপের আড়ালে ওত পেতে থেকে হঠাৎ হামলা চালাচ্ছে। হাতির আক্রমণ প্রতিরোধে আদিবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলায় নেমেছে। হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্তরা বনদপ্তরের নজরদারির পাশাপাশি খাদ্য, বাসস্থান, কর্ম, শিক্ষা স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তামূলক উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ দাবি জানাচ্ছে। হাতির হানায় বড় রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা, শালবনি, খড়গপুর গ্রামীণ এবং ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ঝাড়গ্রাম সদর দিনপুর লালগড় গোপীবল্লভপুর জামবুনি ও নয়াগ্রাম ব্লক। বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলার বনাঞ্চল সংলগ্ন কিছু এলাকাতেও হাতির উপদ্রব বেড়েছে। দলমা পাহাড় এলাকা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে খনিজ সম্পদ তোলার জন্য জঙ্গল সাফ করে ডিনামাইট ফাটানোয় আদি বাসস্থানগুলিতে নিজেদের আর নিরাপদ মনে করছে না হাতির দল। খনিজ সম্পদের জন্য জঙ্গল কেটে ফেলায় হাতিদের খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব বাড়ছে। তাই দলমা পাহাড় ছেড়ে তারা ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার জঙ্গলমহলের জেলাগুলোতে। তাতেই সমস্যা বাড়ছে বনাঞ্চল সংলগ্ন সমতলে। দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া পুরুলিয়া ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি বড় অংশে, কয়েক বছর ধরে কৃষিজ ধান, আলু, ফলের বাগান, শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি করছে হাতির দল। এলাকার বাসিন্দারা দলবদ্ধভাবে বাজি ফাটিয়ে, হুলা জ্বালিয়ে হাতিদেরকে অভুক্ত অবস্থাতেই জঙ্গলে তাড়িয়ে দিচ্ছে বটে কিন্তু খিদের তাড়নায় জঙ্গল ছেড়ে ফের লোকালয়ে চলে আসছে। কারণ জঙ্গলের ফলের গাছে হাত পড়েছে গাছ পাচারকারীদের। হাতির আক্রমণে মৃতদের পরিবারের জন্য রাজ্য সরকার যে ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছে তাতে একটা পরিবারের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য একজনের চাকরি এবং আর্থিক প্যাকেজ বাড়ানোর দাবি তুলেছেন জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা। হাতি তাড়ানোর সম্পূর্ণ দায়িত্বও সরকারের নেওয়ার পাশাপাশি ফসল নষ্ট ও ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধিরও দাবি তুলেছেন আদিবাসীরা। কারণ তারা বুঝতে পারছে হাতিদের আদি বাসস্থানে জঙ্গল সাফ করে যেভাবে খনিজ অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে হাতিদের প্রায় বিতাড়ন করা হচ্ছে তাতে জঙ্গলমহলের বাসিন্দা হিসাবে এরপর হাতিদের সঙ্গেই বরাবর বসবাস করতে হবে। তাই এই বিপদ নিয়েই সরকারকে তাদের পাশে থাকার দাবি তুলতে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছেন জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা।