দলনেত্রী যা বার্তা দেবেন সেটাই শুনে চলতে হবে, বার্তা অভিষেকের

‘দল কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। পঞ্চায়েতের প্রার্থী হবে ইলেক্টেড, সিলেক্টেড নয়।’ অর্থাৎ মানুষ যাকে চাইবে তিনিই প্রার্থী হবেন। আর নামের তালিকা চূড়ান্ত করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেই অনুযায়ী সকলকে চলতে হবে।’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে এমনই কড়া বার্তা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাংগাঠনিক জেলার সভাপতিদের নিয়ে এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই বৈঠক থেকেই কেমন হবে পঞ্চায়েত ভোট বা কীভাবে প্রার্থী নির্বাচন হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিতে দেখা যায় অভিষেককে। এরই পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাতে তৃণমূলের ভূমিকা কী হবে এদিনের বৈঠকে তারও রূপরেখা তৈরি করে দেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানান, ‘২০১৮ আর ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে অনেক ফারাক৷ বিধায়ক- সাংসদ বাছাইয়ের মতো করে ভোট হবে এই পঞ্চায়েতে। রাজনৈতিক সবক’টি দল গণতান্ত্রিক ভাবে প্রার্থী, মনোনয়ন দেবে। লোকসভা, বিধানসভায় যেভাবে ভোট হয়েছে সেভাবে হবে। যেখানে বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে পারবে না, প্রয়োজনে আমরা দাঁড়িয়ে থেকে মনোনয়ন জমা করাব।‘
এরই পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও হুঁশিয়ারির বার্তা দিতে দেখা যায় অভিষেককে। জানান, ‘সকলের সঙ্গে আলোচনা করে নাম পাঠান। এমন কিছু নাম এসেছে যাদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছে। দল তাঁদের প্রার্থী করবে না। করে খাওয়ার জায়গা পঞ্চায়েত নয়। আপনাদের থেকে প্রাপ্ত তালিকা আমরা নেত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব।’
শুধু তাই নয়, এদিনের এই ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেকের কাছে ধমক খেতেও দেখা যায় উত্তরবঙ্গের দুই দাপুটে তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ এবং রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল,দলীয় কাজে অবহেলার মতো একাধিক ইস্যুতে এই দুই বর্ষীয়ান নেতাকে কড়া বার্তা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক। শুধু এঁরা দুজন নয়, অন্যান্য পদাধিকারীদেরও নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটিয়ে ফেলার ডেডলাইন বেঁধে দেন তিনি। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, সমস্যা না মিটলে পদাধিকারীদের সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। এরই রেশ ধরে অভিষেক এও জানান, ১৪ এপ্রিলের দুপুর ১২টার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি তৈরি করতে হবে। ১৭ তারিখের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ব্লক কমিটি ও ২৪ তারিখের মধ্য়ে পূর্ণাঙ্গ অঞ্চল কমিটি তৈরি করতে হবে।
সঙ্গে এও বলেন, ‘যে পদাধিকারী ইগো নিয়ে বসে থাকবেন বা ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না তাঁরা দল ছেড়ে চলে যান।‘ ব্লক সভাপতিদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চান, ‘আচ্ছা, আপনারা বুথ কর্মীদের খোঁজ কেন রাখেন না? তাঁদের আপনারা কী ভাবছেন? অফিসে বসে হোয়াটসঅ্যাপে দল চলবে না কি? পরের ভোটে জিতবেন কী করে?’ এরই পাশাপাশি ব্লক সভাপতিদের নিয়মিত বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেন।
এদিকে এদিন ১০০ দিনের কাজে বাংলাকে বঞ্চনা নিয়েও আমজনতাকে বার্তা দিতে বলেন অভিষেক। এই প্রসঙ্গে অভিষেক এও জানান, ‘বাংলা একমাত্র রাজ্য, যার সাথে বঞ্চনা করা হচ্ছে। মানুষের কাছে গিয়ে বোঝান, বিজেপি হেরে গিয়ে টাকা আটকে রেখেছে।’ সঙ্গে এও জানান, ইদের পর ২৪ তারিখ থেকে ২৫ মে অবধি স্বাক্ষর গ্রহণ চলবে। ১০০ দিনের কাজে বঞ্চিতদের নিজের হাতে প্রধানমন্ত্রী ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে চিঠি লিখতে হবে। প্রত্যেক বুথ থেকে, প্রত্যেক অঞ্চল থেকে এই চিঠি লেখা হবে। প্রসঙ্গত, অন্তত দেড় কোটি স্বাক্ষর ও ২ লক্ষ মানুষকে নিয়ে রাজ্যের পাওনা আদায় করতে দিল্লি যাবেন অভিষেক। এই প্রেক্ষিতে তাঁর ঘোষণা, ‘টাকা আদায় করেই ছাড়ব।‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =