রূপম চট্টোপাধ্যায়
জামদানি শাড়ি ক্রমশ সস্তা হচ্ছিল গত কয়েক বছর ধরে। এবার এমন সুলভ হয়েছে যে বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরের মহিলাদের পুজোর বাজারে একাধিক জামদানি শাড়ি সহজেই জায়গা করে নিয়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে বেগমপুরি ও টাঙ্গাইল শাড়ি। দুর্মূল্যের এই বাজারে এই সস্তার পণ্য দেখে দোকানে দোকানে ভিড় আর ভয় দুটোর পাল্লাই সমান। প্রশ্ন দুটি , এটা তাঁতের শাড়িতো ? একদম সুতির শাড়ি? এসি দোকানের মালিক, কর্মচারীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাতলে দিচ্ছেন, একশো শতাংশ সুতি ও তাঁত। কিন্তু দাম কমার রহস্য লুকিয়ে আছে , ব্যবসায়ী-বিক্রেতার এই মিথ্যা ভাষণে। আসলে এই শাড়িগুলো তাঁতও নয়, সুতিরও নয়। এগুলো পাওয়ারলুমে বোনা পলিয়েস্টার রেয়ন। যা বাংলার ঐতিহ্যশালী তাঁত শিল্পকে পঙ্গু করে ক্রমশ এই বাংলা এবং দক্ষিণ ভারতে ( বিশেষ করে তামিলনাডু) বিকল্প জায়গা করে নিয়েছে।
ট্র্যাকটর হাল-বলদকে এবং চালকল ঢেঁকিকে বিদায় দিয়েছে। এখন পাওয়ারলুম দখল করে নিচ্ছে হ্যান্ডলুমের জায়গা। পাওয়ারলুম দুটো থেকে আটটা শাড়ি বোনার কাজ করে। প্রতি সপ্তাহে শান্তিপুর, ফুলিয়াতে ৬/৭ ট্রাক বোঝাই হয়ে পলিয়েস্টার রেয়ন ঢুকছে। কখনও এই পলিয়েস্টার একা, আবার কখনও বিটি কটনের সাথে মিশিয়ে কাপড় বোনা হচ্ছে। সাঁঝের হাটের পরাণ দাস জানান, এই বছরের গোড়ায় মুম্বাইতে খাদি কমিশনারকে ‘পাওয়ারলুম বুনাই বিক্রি না করার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। হ্যান্ডলুম রিজার্ভেশন অ্যক্ট ১৯৮৫ অনুযায়ী শাড়ি, ধুতি, লুঙ্গি, গামছা সহ ১১টি পণ্য পাওয়ার লুমে উৎপাদন করা যাবে না। কিন্তু পাওয়ারলুমের শাড়ি, লুঙ্গি বাজার ছেয়ে ফেলেছে। সরকার জানে , তবে দেখে না। এমনকী তন্তুজের শোরুমে বিক্রি হচ্ছে পাওয়ারলুমে তৈরি শাড়ি।’
২০২২ সালের ডিসেম্বরে থেকে পাওয়ারলুম বসানোর খরচ ও বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিছু তাঁতিকে দিয়ে সূক্ষ্ম সুতি বস্ত্র তৈরি করিয়ে ধনী ক্রেতাদের যোগান দিচ্ছেন। সে বাজারে ,শাস্তিপুর, ফুলিয়া, সমুদ্রগড়, কাটোয়া , বেগমপুরের তাঁতিদের পৌঁছবার কোনও উপায় নেই।