‘শেষ দেখা হল না’, তরুণ মজুমদারের মৃত্যুতে কান্না সন্ধ্যা রায়ের

কলকাতা: তিনি ছিলেন সন্ধ্যা রায়ের অংখ্য ছবির পরিচালক। ছিলেন গুরু। তারপর হন স্বামী।

প্রয়াত চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারের সঙ্গে সন্ধ্যার সম্পর্ক সিনেমার শেটে। তারপর বিয়ে। যদিও একেবারে শেষটায় একসঙ্গে থাকা হয়নি তাঁদের। মানুষটাকে চোখের দেখা দেখেননি অনেকদিন। তরুণ মজুমদারের প্রয়ানে সেই আক্ষেপই ঝরে পড়ছিল তাঁর একসময়ের জীবন সঙ্গী সন্ধ্যা রায়ের মুখে। জীবনের এতগুলো বছর যে মানুষটার সঙ্গে সুখে, দুঃখে কাটিয়েছেন তিনি, আজ তাঁর চলে যাওয়াটা মানতে পারছেন না অভিনেত্রী।

তরুণ-সন্ধ্যার সম্পর্ক শুধু স্বামী-স্ত্রীর ছিল না, সংসারের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে তাঁদের সম্পর্ক ছিল গুরু-শিষ্যেরও। তরুণের হাত ধরেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রি চিনেছিল এক অন্য সন্ধ্যাকে। যে সন্ধ্যা কখনও বাংলা ছায়াছবির পরিবারের দায়িত্বশীল বউমা, আবার কখনও দুঃখিনী স্ত্রী, আবার কখনও বা মা। সন্ধ্যা রায় (Sandhya Roy) তাঁর সবথেকে বেশি ছবি করেছেন তরুণ মজুমদারের পরিচালনাতেই।

আজ সেই গুরুবিয়োগ। ধরা গলাতেই সন্ধ্যা জানালেন, ‘সারাজীবন শুঝু কাজ করে গেলেন। কাজের প্রতি এমন নিষ্ঠা, মনোযোগ আর কারও আছে কিনা, বলতে পারব না! বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে একাধিক শিল্পীকে গড়েছেন। কাজের সময় খাওয়াদাওয়া, আড্ডা এসব তাঁর জীবনে ছিল দূরঅস্ত। শেষসময়েও অসুস্থ হয়ে পড়লেন সেই কাজ করতে গিয়েই। কাজের ব্যবস্তার জন্য কতদিন ওঁর মুখটা দেখতে পাইনি।’ তরুণ মজুমদারের অবস্থা সঙ্কটজনক। খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু দেখতে পাননি। বর্ষীয়াণ পরিচালক বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে ছিলেন। সেখানে সবারই প্রবেশ নিষিদ্ধ। চোখের দেখা হয়নি। তবে তরুণ মজুমদারের কাজকর্মের খোঁজ রাখতেন সন্ধ্যা।

স্বামীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বর্ষীয়াণ অভিনেত্রী বললেন, ‘দিন কয়েক আগেও ঝাড়গ্রামে লোকেশন দেখতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরেই হঠাৎ অসুস্থ। হাসপাতালেও দেখতে গিয়েছিলাম। অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই ঈশ্বরের কাছে দিনরাত প্রার্থনা করতাম। যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু সেটা আর হল কোথায়? উনি আর নেই… আর কী বলব আমি?’,

নিঃসন্তান দম্পতি হলেও কাজের সূত্রই বেঁধে রেখছিল তাঁদের। কত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একসঙ্গে গড়েছেন দু’জনে। দেবশ্রী রায় থেকে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। সবই তরুণ  মজুমদারের আবিষ্কার। তাঁর ছবির নায়িকাদের লুক থেকে প্রশিক্ষণ, সবসময় স্বামীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন সন্ধ্যা। যদিও শেষের দিকে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

সন্ধ্যার কথায়, ‘কী অসম্ভব প্রাণপ্রাচুর্য ছিল।কী অসম্ভব কাজপাগল ছিলেন। অনেক দিন সে ভাবে যোগাযোগ নেই। কিন্তু তাঁর সব খবরাখবরই পেতাম। বড্ড শখ ছিল, শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জনপদবধূ’ উপন্যাস নিয়ে ছবি বানাবেন। নায়িকা হিসেবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ওঁর প্রথম পছন্দ ছিলেন। পাশাপাশি, ছবিতে নাচের ভূমিকাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছবিটা আর করা হয়ে উঠল না।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 13 =