নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা: একজন উত্তর কলকাতার, অন্য জন দক্ষিণ কলকাতার। মন মিলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দিনগুলোতে। গাঁটছড়া বাঁধার পর অশান্তি, ভুল বোঝাবুঝি। যার জল গড়াল কলকাতা হাই কোর্ট পর্যন্ত।
কিন্তু এই লড়াই, মন থেকেই কি চেয়েছন দম্পতি? হয়তো কিছুটা তাঁদের মন আঁচ করতে পেরেই বিচারপতি দিলেন একেবারে অন্য নিদান। ভাঙা নয়, জোড়ার আশায় দম্পতির জন্য কলকাতার ইকো পার্কে খোলা জায়গা, সুন্দর প্রকৃতির মাঝেই দুরাতের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন বিচারপতি নিজে উদ্যোগী হয়ে। আর তাঁর এই পরামর্শ মেনেছেন দম্পতি। সব কিছু ফুরিয়ে যাওয়ার আগে আর একটাবার শেষ চেষ্টা করে দেখতে চান তাঁরাও।আদালতকে তাঁরা জানিয়েছেন, নিজেদের খরচে দু’রাত সেখানে কাটাবেন। চেষ্টা করে দেখবেন।
আদালত সূত্রের খবর, যুগলের প্রণয়ের সূচনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘ প্রেম করার পর ঘর বাঁধা। দু’জনেই শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, ভালো চাকরি করেন। মহিলা সল্টলেক সেক্টর ফাইভের নামি আইটি কোম্পানির কর্মী, তাঁর স্বামী উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী। কিন্তু বিয়ের তিন মাসের মাথায় ছন্দপতন ঘটে। কিছু ভুল বোঝাবুঝি থেকে সম্পর্কে চিড়। সাড়ে আট বছরের বৈবাহিক জীবনে দূরত্ব শুধু বেড়েছে। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিয়ের তিন মাসের মাথায় অপর্ণা বাপের বাড়িতে ফিরে যান। তার প্রায় সাড়ে সাত বছর পর অয়নের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ, বিয়ের গয়না-সহ বেশ কিছু সামগ্রী অর্জুন আটকে রেখেছেন। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় অর্জুন হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলাতেই দু’জনকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি চন্দ। দম্পতিকে জানান, তলবের একটাই উদ্দেশ্য – যদি ওঁদের ফের মিলমিশ করিয়ে দেওয়া যায়। ঘর ভাঙা খুব সহজ, গড়ে তোলা কঠিন।
এরপর বিচারপতি অর্জুনের কাছে জানতে চান, “আপনি সোনার গয়না ফেরাননি কেন? দিয়ে দিন ওঁকে।” অর্জুনের উত্তর, “পুরোটা সত্যি নয়।”দু’জনের উদ্দেশে বিচারপতির আহ্বান, “চেষ্টা করুন না, আবারও একসঙ্গে থাকতে! আপনারা শিক্ষিত, রুচিশীল, রোজগেরে। আপনারা চাইলে আমি একটু চেষ্টা করতে পারি।” শুনে অর্জুনের সপাট প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি তো চাই ও ফিরে আসুক।” সম্মতি জানান অপর্ণাও। বিচারপতি তৎক্ষণাৎ চেম্বার জুনিয়রকে বলেন, কলকাতার বুকে মনোমুগ্ধকর জায়গা খুঁজতে। সব কিছু ঠিক থাকলে আজই সেখানে যাচ্ছেন দম্পতি।