যাত্রা শুরু পুরী-হাওড়া বন্দে ভারতের, রাজ্য পেল দ্বিতীয় বন্দে ভারত

সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে সবুজ পতাকা উড়িয়ে রাজ্যের দ্বিতীয় সেমি বুলেট ট্রেন হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই নিয়ে রাজ্য পেল দ্বিতীয় বন্দে ভারত। যা নিয়ে রাজ্যবাসীর বিশেষ উৎসাহের কারণ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে তার দ্বিতীয় বাড়ি ওডিশার পুরী। যেখানে প্রতি বছর বাংলা থেকে জগন্নাথ ধাম এবং পুরীর সমুদ্রের টানে হাজার হাজার মানুষ ওডিশাতে যান। এবার এই সেমি বুলেট বন্দে ভারতের মাধ্যমে একবেলাতেই যেমন পৌঁছে যাওয়া যাবে সৈকত শহরে, ঠিক একইভাবে ওই দিনেই পুরী থেকে ফের রাজ্যে ফেরত আসাও সম্ভব হবে।

পুরী থেকে ওই ট্রেনটি হাওড়ায় এসে পৌঁছবে তাই হাওড়াতেও পৃথক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। হাওড়া স্টেশনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এজিএম অর্চনা জোশী, হাওড়ার ডিআরএম মনীশ জৈন, হাওড়ার সংসদ প্রসন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ রেলের উচ্চপদস্থ কর্তারা।

বৃহস্পতিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে হাওড়া সদরের লোকসভার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ভারতীয় রেল প্রচুর উন্নতি করছে। বন্দে ভারত নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। এমন উন্নতমানের ট্রেনকে দেশ জুড়ে চলতে দেওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার এই অনুষ্ঠানকে সম্বধিত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, বন্দে ভারত আধুনিক ভারত ও আকাঙ্খি ভারতীয়দের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বন্দে ভারতের গতির মধ্যে ভারতের উন্নতি ও প্রগতির গতিও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এই ট্রেন রেল সফরের অভিজ্ঞতাকে বদলে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান অমৃত মহৎসবের এই সময়ে দেশে আরও একতার প্রয়োজন। যত অভ্যন্তরীণ একতা বাড়বে ততই দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছবে। আর এই বন্দে ভারত ট্রেন তারও প্রতীক বললেই জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই অমৃতকালে, বন্দে ভারত ট্রেনগুলিও উন্নয়নের ইঞ্জিন হয়ে উঠছে, এবং ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর চেতনাকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ভারতীয় রেল সবাইকে এক সুতোয় বেঁধে রাখে। বন্দে ভারত ট্রেনও এই প্যাটার্ন অনুসরণ করে এগিয়ে যাবে। এই বন্দে ভারত হাওড়া ও পুরীর মধ্যে, বাংলা ও ওডিশার মধ্যে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। আজ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ১৫টি বন্দে ভারত ট্রেন চলছে। এই আধুনিক ট্রেনগুলি দেশের অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এছাড়াও রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণও বৃহস্পতিবার জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে চালু হল পুরী-হাওড়া বন্দে ভারত। এছাড়াও ওডিশার কটক ও পুরী স্টেশনকে অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের স্টেশনে রূপান্তরিত করার প্রকল্পের শিল্যান্যাস করা হয়। গোটা প্রকল্পের জন্য আঠারো হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ হতে চলছে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও ওডিশার সমস্ত রেল ট্র্যাকের বৈদ্যুতিকরণের কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে।

এতদিন হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে পুরী পৌঁছনোর দ্রুততম ট্রেনটি হল হাওড়া-পুরী শতাব্দী এক্সপ্রেস। এই ট্রেনটি ৭ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটে পুরী পৌঁছে দেয়। যাত্রাপথে ট্রেনটি ছ’টি স্টেশনে দাঁড়ায়। শতাব্দীর গড় গতিবেগ হল প্রতি ঘণ্টায় ৬৬ কিলোমিটার। অপরদিকে শ্রী জগন্নাথ এক্সপ্রেস ১৮ টি স্টেশনে স্টপেজ দিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে পুরী পৌঁছয়। যদিও বন্দে ভারত হাওড়া থেকে পুরী পৌঁছতে সময় নেবে মাত্র ৬ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। বন্দে ভারতের গড় গতিবেগ হবে ৭৮ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়।

বৃহস্পতিবার পুরী থেকে উদ্বোধন করা হল রাজ্যের দ্বিতীয় ও দক্ষিণ পূর্ব রেলের প্রথম বন্দে ভারত ট্রেনটি । সময়সূচি অনুসারে ওই রাজ্যের একাধিক প্রকল্প উদ্বোধন করার পর ঠিক সকাল ১২ টা ৩০ মিনিটে সবুজ পতাকা উড়িয়ে ০২৮৯৬ পুরী-হাওড়া বন্দে ভারতের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরে বেলা ১ টার সময় ট্রেনটি পুরী থেকে হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয। আগামী ২০ মে শনিবার থেকে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করবে বন্দে ভারত বলেই জানান হয়েছে দক্ষিণ পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে।

যদিও দক্ষিণ পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, পুরী হাওড়ার যাওয়ার পথে ট্রেনটি ৭ টি স্টেশনে থামবে। বেলা ১ টার সময় পুরী স্টেশন থেকে রওনা হয়ে খুরদা রোডে পৌঁছবে বেলা ১ টা ৪০ থেকে ১ টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। এরপর ভুবনেশ্বর স্টেশন পৌঁছবে বেলা ২ টো ১৫ থেকে ২ টো ২৫ মিনিটের মধ্যে । কটক পৌঁছবে বেলা ৩ টে থেকে ৩ টে ১০ মিনিটের মধ্যে । যোজপুর কে জংশন পৌঁছবে বিকেল ৪ টে থেকে ৪ টে ১০ মিনিটের মধ্যে । ভদ্রক পৌঁছবে বিকেল ৫ টা ২০ থেকে ৫ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে । বালাসোর পৌঁছবে সন্ধ্যে ৬ টা ৪০ থেকে ৬ টা ৫০ মিনিটের মধ্যে । খড়গপুর পৌঁছবে রাত ৮ টা ১৫ থেকে ৮ টা ২৫ মিনিটের মধ্যে।  পুরীতে বেলা ১ টায় রওনা হয়ে  সাড়ে ৮ টার মধ্যে হাওড়া পৌঁছে যাবে বন্দে ভারত৷

বৃহস্পতিবার বন্দে ভারতের মেনুতেও থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা।ভেজিটেরিয়ান মেনু। যার।নিরামিষ আহারের মধ্যে প্রথমে থাকছে জল, বাটার মিল্ক, ফলের রস। সকালের খাবারে থাকছে বাটার ভেজ স্যান্ডউইচ, সিঙারা, মিষ্টি, নোনতা এবং চা। মধ্যাহ্নভোজে থাকছে বাসমতি চালের ভাত, মেথি পরোটা, ডাল, মটর পনির মসলা, সবজি, দই ও মিষ্টি ।

দক্ষিণ পূর্ব রেলের থেকে এই ট্রেনের ভাড়ার তালিকাও  প্রকাশ করা হয়েছে।  ট্রেনের ইকোনমিক চেয়ার কারে খাওয়া দাওয়া নিয়ে পুরী থেকে হাওড়া পর্যন্ত ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ১ হাজার ২৪৫ টাকা। আর কেউ যদি খাবার নিতে না চান তাহলে সেক্ষেত্রে ভাড়া হবে ১ হাজার ১২৫ টাকা। হাওড়া থেকে পুরী পর্যন্ত এক্সিকিউটিভ ক্লাসের ভাড়া খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর কোনও যাত্রী যদি খাওয়া-দাওয়া না নিলে তাহলে সেই ক্ষেত্রে ভাড়া দাঁড়াবে ২ হাজার ১৪৫ টাকা ৷

পাশাপাশি পুরী থেকে হাওড়া যেতে গেলে ইকোনমিক চেয়ার করে খাওয়া দাওয়া নিয়ে ভাড়া পড়বে ১ হাজার ৪১০ টাকা। আর খাওয়া ছাড়া ভাড়া পড়বে ১ হাজার ১২৫ টাকা। পুরী থেকে হাওড়া পর্যন্ত এক্সিকিউটিভ ক্লাসে খাওয়া নিয়ে ভাড়া পড়বে ২ হাজার ৫৯৫ টাকা। কোনও যাত্রী যদি খাবার নিতে না-চান সেই ক্ষেত্রে তার ভাড়া দাঁড়াবে ২ হাজার ২৪৫ টাকায়। বুধবার ১৭ মে থেকেই ২২৮৯৫ বন্দে ভারতে পুরী যাওয়ার টিকিট পিআরএস এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 13 =