নিজস্ব প্রতিবেদন, আমতলা: পরিবেশ দূষণের কারণে রাজ্যের সমস্ত শহরাঞ্চলে টু স্ট্রোক অটো চলাচল অনেক আগেই নিষিদ্ধ করেছে আদালত। তবে পুরসভার মর্যাদা না পাওয়ায় আমতলা এলাকায় সেই ভাবে সরকারি তরফ থেকে টু স্ট্রোক অটো বাতিল করার কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়নি এমনটাই আলিপুর পরিবহণ দপ্তরের সূত্রে খবর। অটো প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি ও স্থানীয় অটো ইউনিয়নগুলির ব্যবস্থাপনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই এলাকায় টু স্ট্রোক অটোর পরিবর্তে গ্যাসচালিত গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা পরিবহণ দপ্তর ওই গ্যাস অটো মালিকদের প্রয়োজনীয় রুট পারমিটও মঞ্জুর করেছে।
কিন্তু অধিকাংশ অটোচালকদের অভিযোগ, তাঁরা আবেদন করেও এখনও পর্যন্ত গ্যাস অটো পাননি। আমতলা- জুলপিয়া রুটে ৪০০ শতাধিক গাড়ি চলাচল করে তার মধ্যে মাত্র ৪৫টি গাড়ি প্রয়োজনীয় রুট পারমিট সহ গ্যাস গাড়ির অনুমোদন পেয়েছে। সেটাও আবার বাম আমলে। বিগত ১১ বছরে এই রুটে কোনও গ্যাস গাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আমতলা-হরিতকিতলা অটো রুটে ২০০ অটো চলাচল করে, কিন্তু একটিও গাড়ি গ্যাস দ্বারা চালিত নয়।
এছাড়া আমতলা- ঠাকুরপুকুর রুটে দেড়শো গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু তার মধ্যে বাম আমলের শেষের দিকে মাত্র ৪৫টি গাড়িকে গ্যাস গাড়িতে রূপান্তরিত করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল বাদ বাকি গাড়িগুলি আজও টু স্ট্রোক। এছাড়া আমতলা- শিরাকোল ও আমতলা- গোতলাহাট রুটে প্রায় কমবেশি ৩০০ এর ওপর অটো চলাচল করে। যার সবগুলোই টু স্ট্রোক গাড়ি অথচ এই গাড়িগুলো আদালত কর্তৃক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ গাড়ি। আমতলা-বাখরাহাট ও আমতলা- হাটতলা এবং আমতলা-ঘোষেরহাট রুটের প্রায় সব অটো গ্যাস গাড়িতে রূপান্তর করা হয়েছে এই সরকারের আমলে এবং প্রয়োজনীয় রুট পারমিট তাঁরা পেয়েছেন বলে ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের দাবি।
এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষগুলি একযোগে দাবি করেন, ‘আমাদের রুটের সমস্ত গাড়িগুলোই গ্যাস গাড়িতে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র একাধিক বার আলিপুরের পরিবহণ দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজও গ্যাস গাড়িতে রূপান্তরের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় রুট পারমিট বরাদ্দ করা হয়নি। এই বিষয়ে আমরা এখনও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ রেখে চলেছি। আমরাও চাই অবিলম্বে এই গাড়িগুলি প্রয়োজনীয় রুট পারমিট সহ গ্যাস গাড়িতে রূপান্তরের অনুমোদন পাক।’
এক যাত্রী অসীম কুমার বিশ্বাসের অভিযোগ, প্রতি অটোতে চারজন যাত্রীর পরিবর্তে ছ’-সাত জন করে যাত্রী নিয়ে পরিবহণ করা হয়। অনেকবার বিভিন্ন রুটে ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে আবেদন, এ ব্যাপারে ট্র্যাফিক পুলিশ যেন একটু কঠোর ভাবে রুল বলবৎ করে। এ প্রসঙ্গে অটো চালকদের দাবি, দিনে দিনে জ্বালানির দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে চলতি ভাড়ায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি তাঁরা অবিলম্বে সমস্ত টু স্ট্রোক গাড়িগুলিকে গ্যাস গাড়িতে পরিণত করার দাবি করেন।
ডায়মন্ড হারবার ও যাদবপুর জেলা সাংগঠনিক আইএনটিটিইউসি সভাপতি শক্তিপদ মণ্ডল জানান, এই মুহূর্তে যিনি জেলা আরটিওর বোর্ড সদস্য আছেন এই বিষয়ে তাঁর উদ্যোগ হওয়া দরকার। আশা করা যায়, বর্তমান বোর্ড মেম্বার এ বিষয়ে উদ্যোগী হবেন। স্থানীয় সাতগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক মোহনচন্দ্র নস্কর বলেন, ‘সমস্যা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। ভুক্তভোগী অটো চালকরা যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তা হলে আমি পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা মেটানোর চেষ্টা করতে পারি।’ এই বিষয়ে জেলা আরটিও বোর্ড সদস্য মন্টুরাম পাখিরার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।