নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: গলায় রক্ত জবা কপালে লাল চন্দন এই বেশেই পূজিতা হন মা মুন্ডমালিনী। ঠিক এরকমই দেখতে অভ্যস্ত মায়ের ভক্তরা। কিন্তু এক্ষেত্রে মা কালী কোনও চিন্ময়ী রূপের নন, মা সাক্ষাৎ জীবন্ত। যেখানে মণ্ডপে মণ্ডপে বা বিভিন্ন পারিবারিক পুজোতে দেবী কালীর মূর্তি পুজো করা হয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসের মির্জাপুরে সাঁতরা বাড়িতে মূর্তির পরিবর্তে বড় বউমাকে কালীর আসনে বসিয়ে পূজিত হতে দেখা গেল। বছরের পর বছর হয়ে আসছে এই আচার।
রীতি অনুযায়ী, সাঁতরা পরিবারের বড় বউমাকে গলায় রক্ত জবা এবং কপালের লাল চন্দনের তিলক দিয়ে সাজাতে দেখা যায়। তারপর শুরু হয় একেবারে শাস্ত্রমতে পুজো পাঠ। আর এই জীবন্ত দেবীর পুজো অর্চনা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ভিড় জমালেন অসংখ্য মানুষ। কথিত আছে, একটা সময় এই বংশের কোনও পূর্বপুরুষ মূর্তিপূজো না করার স্বপ্নাদেশে আদেশ পেয়েছিলেন, কোনও মূল্যবান ধাতু দিয়ে মায়ের মূর্তি তৈরি পুজো করার। তবে সেই সময় আর্থিক অস্বচ্ছলতার জেরে দামী ধাতু দিয়ে মূর্তি গড়ে পুজো করতে তাঁরা ব্যর্থ হলেও, এক অনন্য পন্থা অবলম্বন করেছিলেন এই বংশের পূর্বপুরুষেরা। তাঁরা শুরু করেছিলেন মানবী দেবীর পুজো, সেই রীতি আজও অব্যাহত।
আজও পরিবারের বড় গৃহবধূকে দেবীর আসনে বসিয়ে পুজো করা হয় আরম্ভরের সঙ্গে। সেই সময় তাল ™াতা দিয়ে তৈরি মন্দিরে মানবী দেবীর পুজো শুরু হয়েছিল সাঁতরা পরিবারে। এখন অবশ্য পাকাপোক্ত মন্দির তৈরি হয়েছে, সেখানেই চলে দেবীর আরাধনা। এই সাঁতরা পরিবারের বর্তমানের বড় গৃহবধূ হীরাবালা সাঁতরা গত ৩৮ বছর ধরে মা কালী রূপে পূজিতা হয়ে আসছেন, এবারেও তার অন্যথা হয়নি। তাঁকে দেবীর আসনে বসানোর পর, পুরোহিত দেবী রূপেই পুজো করলেন।
এই পরিবারের জামাই শ্যামল সাঁতরা জানান, দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে,পরিবারের সব সদস্যরা বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আগের তুলনায় আড়ম্বর আরও বেশি হচ্ছে, এই পুজোকে কেন্দ্র করে আশপাশের সকল মানুষ মেতে ওঠেন। এই পরিবারের কন্যা প্রীতিকণা সাঁতরা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই এই রীতি দেখে আসছি আমার জন্মযাত্রী মা কালী রূপে পূজিত হয়, এই পুজোকে কেন্দ্র করে আমাদের খুবই আনন্দ উপভোগ হয়।’ আগামী দিনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই রীতি পালন হয়ে আসবে বলেই দাবি পরিবারের সদস্যদের।