নিজস্ব প্রতিবেদন, পুরুলিয়া: বংশে কোন কন্যা সন্তান ছিল না। তাই কন্যা সন্তানের কামনায় দেবীর আদেশে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ নম্বর ব্লকের আড়রা গ্রামের মিশ্র পরিবারে শুরু হয়েছিল দুর্গোৎসব। প্রায় ৩২২ বছর আগে শুরু হওয়া পুজো এখনও সমান আড়ম্বরে চলছে। আজও সেই পুজোর অংশিদার হিসেবে মিশ্র বাড়ির মহিলারাই প্রধান ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
জানা গিয়েছে, আড়রা গ্রামের মিশ্র পরিবারে বংশপরম্পরায় কোনও কন্যা সন্তান ছিল না। তাই সেই বংশের আদি পুরুষ রাজারাম মিশ্র কন্যা সন্তানের প্রার্থনায় বারাণসীতে অন্নপূর্ণা মন্দিরে যাবেন বলে ঠিক করেন। যাওয়ার সব রকম প্রস্তুতিও হয়ে গিয়েছিল। সেই রাতেই রাজারামবাবু স্বপ্নে একটি লাল শাড়ি পরিহিতা ফুটফুটে মেয়েকে দেখতে পান। ছোট্ট মেয়েটি রাজাকে স্বপ্নাদেশ দেয়, গ্রামে দুর্গাপূজা করার। দুর্গাপুজো করলে তাঁদের বংশে কন্যা সন্তান হবে বলে জানায় সে। তার পর থেকেই আড়রার মিশ্র পরিবারের দুর্গাপুজা হয়ে আসছে। মিশ্র পরিবারের বর্তমান সদস্য অরিন্দম মিশ্র বলেন, ‘দেবীর স্বপ্নাদেশের পর কাশীপুর রাজার অনুমতি নিয়ে পুজো শুরু হয়। প্রথমে অস্ত্র পুজো করা হত। তারপর ঘট স্থাপন করে পুজো করা হয়। পরে শুরু হয় মূর্তি পূজা। প্রায় ১০০ বছর ধরে মূর্তি পুজো চলে আসছে। মূর্তি পুজা হলেও, দেবীর বেদিতে এখনও সেই অস্ত্র এবং পুরনো পুঁথি রেখে পুজো করার রীতি আছে। এখন পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব আমি সামলাই। আমাদের পুজো পারিবারিক হলেও গ্রামের সকলে সামিল হন। বর্তমানে পুজো সার্বজনীন রূপ ধারণ করেছে। বাড়ির মহিলারা পুজোয় বিশেষ ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আমাদের এখানে দুর্গা দেবীকে কন্যা সন্তান হিসাবে পুজা করা হয়।’
পরিবারের সদস্যা সন্ধ্যা মিশ্র বলেন, ‘বহু আগে থেকেই দুর্গাপুজা হয়ে আসছে পরিবারে। আমি প্রায় ৪৫ বছর হল গৃহবধূ হয়ে এসেছি। পুজো একই রকম চলে আসছে। পুজোর ভোগ, আচার -অনুষ্ঠান আমরাই করে থাকি। পুজোর পাঁচটা দিন বাড়ির মহিলাদের বাইরে বেরোনোর অবকাশ থাকে না। শুধুমাত্র পুজোর সময় নয়, সারা বছরই মন্দিরের পুজার্চনা মহিলারা করে থাকেন।’ পরিবারের অপর সদস্যা শিউলি মিশ্র বলেন, ‘বর্তমানে শ্বশুর, শাশুড়ি মার বয়স হয়েছে। তাই এখন আমরাই পুজোর কাজে এগিয়ে এসেছি। আমাদের বংশে কখনও কন্যা সন্তানের অভাব হয়নি।’

