কর্মক্ষেত্রে চালকের অবসরের দিনে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিলেন মেট্রোর জিএম

কলকাতা: অধ্বস্তন কর্মীকে সম্মান করলে পাল্টা সম্মান, শ্রদ্ধাই যে পাওয়া যায় আর কারও তাতে সমাজে কারও ‘স্ট্যাটাস’ যে বি¨ুমাত্র খর্ব হয় না, সেটা দৃষ্টান্ত স্বরূপ সকলের কাছে তুলে ধরলেন মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার।
আর, চাকরি জীবনের শেষ মুহূর্তে জিএম-এর কাছে এমন অভাবনীয় সম্মান পেয়ে চোখে জল ষাট বছরের কার্তিকচন্দ্র মণ্ডলের চোখে। তিনি এতদিন মেট্রো রেলের গাড়ির চালক হিসেবে নিজের কাজ করেছেন। ৩১ অক্টোবর ছিল কর্মক্ষেত্রে তাঁর শেষ দিন। কর্মক্ষেত্রে শেষের সেই দিনেই কলকাতা মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার পি উদয় কুমার রেড্ডি নিজে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন কার্তিকবাবুকে। কর্মজীবনের শেষ পর্যায়ে রেড্ডিরই গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করেছেন কার্তিকবাবু। সেই কর্তার কাছে এমন অভাবনীয় সম্মান পেয়ে আন¨াশ্রু কার্তিকের চোখে।
কার্তিকবাবু ছিলেন পাকা ড্রাইভার। তিনি স্টিয়ারিং ধরলে পিছনে বসা লোকজন নিশ্চিন্ত। কলকাতা মেট্রো রেলে গাড়ি চালক হিসেবে চাকরির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। চাকরি পেয়েও গিয়েছিলেন। দীর্ঘ কর্মজীবন কাটানোর পর সোমবার ছিল কর্মজীবনের শেষ দিন। সেই দিনটিই তাঁর মনের মনিকোঠার চিরজীবন রয়ে গেল। আর একইসঙ্গে মেট্রো কর্তার এই ভূমিকা সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করে নিয়েছে।
চাকরিক্ষেত্রে মেট্রোরেলের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল কার্তিতের উপর। বড় মাপের লোকজনের গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে সর্তক থাকা যে অত্যন্ত জরুরি, তা বলে দিতে হয় না। দায়িত্ব বরাবর সুষ্ঠুভাবেই পালন করেছেন কার্তিকবাবু। সেই কারণেই অফিসের লোকজন বরাবর ভরসা করতেন তাঁকে। ভালওবাসতেন। এমনকী, পি উদয়কুমার রেড্ডির সঙ্গে রোজ কাজে বেরোনোর সুবাদে দু’জনের মধ্যে বেশ সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মঙ্গলবার যেন সেই সম্পর্কেরই প্রতিফলন দেখা গেল। ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার কলকাতার মেট্রো রেল ভবনে কার্তিকচন্দ্র মণ্ডলকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয়। সহকর্মীরা ফুলের তোড়া, উপহারে ভরিয়ে দেন তাঁকে। শেষ মুহূর্তে যখন বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, তখনই দুর্দান্ত এক চমক অপেক্ষা করে ছিল তাঁর জন্য। মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডি কার্তিকবাবুকে প্রস্তাব দেন পিছনের আসনে বসার জন্য। জানান, এদিন রথের সারথি বদল হবে। এতদিন যাঁর জন্য তিনি রোজ কাজের শেষে নির্ভাবনায় বাড়ি পৌঁছতে পেরেছেন, তাঁকেই তিনি নিজে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেবেন।
শুনে তো কার্তিকবাবু হতবাক, স্যার নিজে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন! রেড্ডি জানান, কার্তিকবাবুর কর্তব্যনিষ্ঠা এবং সময়ানুবর্তিতাকে সম্মান জানিয়ে এটুকু করতে চান তিনি। কুণ্ঠা কাটিয়ে শেষে পিছনের আসনে বসেন কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল। স্টিয়ারিং ধরেন উদয়কুমার রেড্ডি। চাকরিক্ষেত্রে এমন সম্মান পেয়ে তখন আবেগে তাঁর গলা বন্ধ হয়ে আসছে। চোখের জলে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে এতদিনের চেনা মানুষগুলো। দু’হাত জড়ো করে জানলার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানালেন। তারপর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডি গাড়ি ছোটালেন তেলেঙ্গাবাগানের উদ্দেশে। সেখানেই বাড়ি কার্তিকচন্দ্র মণ্ডলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − three =