দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ঘরে ফিরলেন বঙ্গকন্যা রিচা ঘোষ। শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামতেই দেখা গেল এক অন্য দৃশ্য—আবেগ, উচ্ছ্বাস আর গর্বের বিস্ফোরণ। হুড খোলা ফুলে সাজানো জিপে বিমানবন্দর থেকে সুভাষপল্লির বাড়ির পথে যাত্রা করেন বিশ্বজয়ী ভারতীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। রাস্তায় উপচে পড়ে মানুষের ভিড়, হাততালি, ফুলের বৃষ্টি—সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবের পরিবেশ। নিজের শহরে এমন অভ্যর্থনা পেয়ে আপ্লুত রিচা বলেন, “নিজের শহরে এভাবে ফিরতে পারব, ভাবিনি। এই ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
রিচার প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে শিলিগুড়ি যেন নতুন সাজে সেজে উঠেছিল। বিকেলে বাঘাযতীন পার্কে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয় নাগরিক সংবর্ধনা। সেখানে শহরের বিভিন্ন ক্লাব, স্কুল ও মহিলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা রিচাকে শুভেচ্ছা জানান। জানা যায়, বাঘাযতীন পার্ক পর্যন্ত রিচার জন্য রেড কার্পেট পাতা হয় এবং তাঁকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয়। শিলিগুড়ি পৌরসভা থেকেও তাঁকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে রিচার কৃতিত্বকে সম্মান জানান এবং রাজ্য সরকারের তরফে তাঁকে পুলিশের চাকরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
রিচার সুভাষপল্লির বাড়ি আলো, ফুল আর আনন্দে ভরে ওঠে। প্রতিবেশীরাও ভীষণ উচ্ছ্বসিত—তাঁদের পাড়ার মেয়েই যে আজ দেশের গর্ব! নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েনি। রিচার মা স্বপ্না ঘোষ মেয়ের ফেভারিট খাবার—ফ্রায়েড রাইস, পনির ও মিক্সড ভেজ—রান্না করে রেখেছিলেন।
এই প্রত্যাবর্তনের পেছনে রয়েছে এক ঐতিহাসিক অর্জন। ৫২ বছর পর প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতেছে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল, আর সেই জয়ের অন্যতম নায়িকা রিচা ঘোষ। গোটা টুর্নামেন্টে তিনি ২৩৫ রান করেছেন, যার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৯৪ রান ছিল তাঁর সেরা ইনিংস। ফাইনালে ২৪ বলে ৩৪ রানের দ্রুত ইনিংসও ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। মোট ১২টি ছক্কা হাঁকিয়ে রিচা প্রমাণ করেছেন, তিনি ভারতের নির্ভরযোগ্য ফিনিশার। শিলিগুড়ির এই ২২ বছর বয়সি তরুণী আজ কেবল একটি শহরের নয়, গোটা দেশের গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

