সুজিত ভট্টাচার্য
গত শুক্রবার কলকাতার অ্যাপেলো হাসপাতালে ব্রেন ডেথ অবস্থায় মৃত্যু হয় পূর্ব বর্ধমান জেলায় পূর্বস্থলী থানার বৈদিকপাড়ার বাসিন্দা সৌমেন ভদ্রের। এরপরেই মৃত ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অসহায়দের জন্য দান করতে রাজি হয়ে যান, মা ইতি ভদ্র ও তার স্ত্রী অঞ্জনা ভদ্র। এরপর সৌমেনের শরীর থেকে তার কিডনি, হার্ট, লিভার প্রভৃতি বের করে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর সঙ্গে কলকাতা পুলিশের সহায়তায় গ্রিন করিডরের মাধ্যমে ওই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানে অসহায় রোগীর দেহে তা সফল ভাবে স্থাপন করা হয়েছে। সেটা জানতে পেরে শোকের মধ্যে কিছুটা হলেও খুশি সৌমেনের স্ত্রী অঞ্জনা ভদ্র। তিনি জানিয়েছেন, তার স্বামীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অন্যের শরীরের সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাদের মধ্যেই তার স্বামী দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন। পূর্বস্থলী নীলমনি ইন্সটিটিউটের মেধাবী ছাত্র ছিল সৌমেন। বাবা
সদানন্দ ভদ্র ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন। তার দুই ছেলের মধ্যে সৌমেনই ছিল বড়। বছর পাঁচেক আগে কাটোয়ার একটি বেসরকারি ব্যাংকে অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার পদে যোগ দেয় ওই মেধাবী ছাত্র। পরে পারুলিয়া এলাকায় অঞ্জনা ভদ্রের সঙ্গে হিন্দু শাস্ত্রমতে তার বিবাহ হয়। একটি শিশু পুত্রও রয়েছে তাদের। মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রচন্ড মাথায় যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ির বিছানায় ঢলে পড়েছিল সৌমেন। এরপরেই তাকে প্রথমে পূর্বস্থলী হাসপাতাল, পরে কালনা হাসপাতাল হয়ে কলকাতার অ্যাপেলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্ত প্রাণ ফিরে পায়নি ওই যুবক। তার পরিবারের দাবি, সৌমেনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে যারা প্রাণ ফিরে পেল, তাদের সঙ্গে যেন মা বাবা, স্ত্রীকে দেখা করতে দেওয়া হয়।
সৌমেনের পরিবারের সিদ্ধান্তে গর্বিত এলাকার মানুষ। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন সৌমেনের পরিবারের মত সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
মৃতের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অনেক অসহায় রোগীর প্রাণ বাঁচাতে পারে। শুক্রবার নবদ্বীপ শ্মশানঘাটে সৌমেন ভদ্রের দেহ দাহ হয়। শোকের ছায়া এখনো গোটা পরিবারে।
এখনো ছেলের শোকে পাথর মা, বাবা, স্ত্রী। শনিবার সকাল হতেই পূর্বস্থলীর বাড়িতে আত্মীয় পরিজনরা ভিড় জমান শোকার্তদের শান্তনা দিতে। এরইমধ্যে মৃত সৌমেনের মা ইতি ভদ্র কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে যেন অন্যরা সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকে। এই আশা নিয়েই আমি আমার ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দান করেছি। আমার ছেলে মহান হয়ে ওদের মধ্যে বেঁচে থাকুক। আগামী দিনে আমার মতো কোনও মাকে যেন আর কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি না যেতে হয়। আমি শুধু চাইছি, আমার ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যাদের শরীরে স্থাপন হয়েছে, তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারি।