ব্যারাকপুর : উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কাঁচড়াপাড়ার বাবু ব্লকে বনগাঁ রোডের ওপর অবস্থিত কুখ্যাত রঘু ডাকাতের স্মৃতি বিজড়িত পাঁচশো বছরের অধিক প্রাচীন কালীবাড়ি। কথিত আছে, অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাধীতে বাংলার প্রায় সর্বত্রই ডাকাতদের আস্তানা ছিল। তৎকালীন সময়ে জঙ্গলে ঘেরা কাঁচড়াপাড়ার বাবু ব্লক ছিল ডাকাত সর্দার রঘু ডাকাত ও তাঁর শাকরেদদের মুক্তাঞ্চল।
এখানকার ইতিহাস বলছে, এখানে নিম গাছের নীচে ছিল কালী মায়ের থান। ডাকাতরা মায়ের থানে সিঁদুর-চন্দন চর্চিত করে পুজো করে অভিযানে বের হত। তবে আজ সবই অতীত। ঊনবিংশ শতাধীর ছয়ের দশকের শেষের দিকে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর থেকে এক পন্ডিত ব্রাহ্মণ সন্তান এসে জঙ্গল পরিষ্কার করেছিলেন। দিনের বেলায় পতিজি গান গেয়ে সময় কাটাতেন। স্থানীয়রা তাঁর গানে মুগ্ধ হয়ে একটি হারমোনিয়াম উপহার দিয়েছিলেন।
পরবর্তীকালে তিনি হারমোনিয়াম বাবা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সেই হারমোনিয়াম বাবা ডাকাত কালীর থান সংস্কার করে তামার ফলকে দক্ষিণাকালীর মূর্তি খোদিত করেন। তিনিই কালীমন্দিরের ডান দিকে সীতারাম মন্দির ও বাঁদিকে বজরংবলির মন্দির গড়ে তোলেন। এখানে দেবীর নিত্য পুজো হয়। তাছাড়া কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এখানে উৎসব হয়। দেবী এখানে জাগ্রত। মনস্কামনা পূরণের জন্য বাংলা ছাড়িয়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় থেকে ভক্তেরা এখানে আসেন। সরকারি সহযোগিতা না মিললেও, ভক্তদের অনুদানেই টিকে রয়েছে রঘু ডাকাতের স্মৃতিধন্য এই কালীবাড়ি। আর ভক্তদের সমাগমে এই কালীবাড়ির খ্যাতি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। মন্দিরের পূজারী আনন্দ ভূষণ চৌবে বলেন, কালীমন্দির যেখানে গড়ে উঠেছে, আগে সেখানে জঙ্গলের মধ্যে বসবাস করতেন রঘু ডাকাত। তিনি মায়ের আদেশ নিয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রওনা দিতেন। ডাকাতি করে তাঁর দলবল নিয়ে এখানে তিনি ফিরে আসতেন। মা-কে প্রণাম করে তিনি লুঠের সামগ্রী নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়া করতেন। পূজারী আরও বলেন, বছরে একবার ঘটা করে মায়ের পুজো করতেন। আর পুজোর দিন রঘুডাকাত নরবলি দিতেন। কিন্তু হারমোনিয়াম বাবা এখানে আসার পর বলিপ্রথা বন্ধ হয়ে যায়। তবে রঘু ডাকাতের এই আবাসস্থলের সুড়ঙ্গপথ নিয়ে এখনও অন্ধকারে কাঁচড়াপাড়াবাসী। এপ্রসঙ্গে মন্দিরের পূজারী আনন্দ ভূষণ চৌবে বলেন, রঘু ডাকাত যেখানে বসবাস করতেন, পালানোর জন্য সেখানে তিনটি গোপন সুড়ঙ্গপথ ছিল। শুনেছি, একবার পথ কাঁচড়াপাড়া স্টেশনের দিকে উঠত। হালিশহর রামপ্রাসাদের ভিটার দিকে গঙ্গার ধারে এবং আরেকটি সুড়ঙ্গপথ কাঁচড়াপাড়া ওয়ার্কশপের দিকে উঠত। কিন্তু সেই সুড়ঙ্গপথের বিষয়ে সকলেই অন্ধকারে।