পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস করার যে অভিযোগ উঠেছে তা গুরুত্ব দিয়ে সরজমিনে খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডিজি। সূত্রে খবর, সোমবার তাঁর কলকাতায় আসার কথা। প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব শুরু হয়েছিল মৃত্যু দিয়ে, শেষ হয়েছে মৃত্যু দিয়ে। ভোটের আগেই মনোনয়ন পর্বে রাজ্যজুড়ে যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে সরব বিরোধীরা। বেসরকারিভাবে মনোনয়ন পর্বে মৃতের সংখ্যা ৬। যদিও, সরকারিভাবে, তা স্বীকার করা হয়নি। এই প্রসঙ্গে কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে পুলিশের থেকে কোনও রিপোর্ট এখনও পায়নি কমিশন। পুলিশ তদন্ত করে বিষয়টি নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা যাচাই করে রিপোর্ট দেওয়ার পরেই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব। এদিকে ঘটনার তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফ থেকে এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিব ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়ে ১৯ ও ২০ শে জুন রাজ্যে ডিজির সফরের বিষয়ে জানানো হয়েছে। সঙ্গে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে এও জানানো হয়েছে, ডিজি আগামী ১৯ ও ২০শে জুন রাজ্যে তাঁর দু’দিনের সফরে একদিকে যেমন মুখ্য সচিব এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান, ঠিক তেমনই অন্যদিকে সন্ত্রাস-কবলিত কিছু এলাকা ঘুরে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রের খবর।
এদিকে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকায় সন্তুষ্ট না হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে চলেছে কমিশন। কারণ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই ভূমিকায় আদৌ সন্তুষ্ট নয় রাজ্য সরকার বা রাজ্য নির্বাচন কমিশন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকাকে কার্যত ‘অনৈতিক হস্তক্ষেপ’ বলে মনে করছে কমিশন। এই অনৈতিক হস্তক্ষেপ ঠেকাতেই আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
একইসঙ্গে রাজ্য সরকারের একাংশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই ভূমিকার পেছনে আমরা রাজনৈতিক গন্ধ পাচ্ছেন। পঞ্চায়েত ভোটের মধ্যে প্রশাসন ও কমিশনের কাজে এ ধরনের হস্তক্ষেপ একেবারেই অনভিপ্রেত। সে কারণেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই পদক্ষেপের নীতিগত বিরোধীতা করা দরকার বলেই মনে করছেন তাঁরা।
এদিকে মুখে কিছু না বললেও, ডিজির সফরের ব্যাপারে কমিশনের অনীহাও স্পষ্ট। কমিশনের এক পদস্থ কর্তার মতে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডিজি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে এসে কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু, এই প্রবণতা চলতে থাকলে আগামী ভোট চলাকালীন নানা ইস্যুতে কখনও তফসিলি জাতি বা উপজাতি কমিশন, কখনও শিশু সুরক্ষা কমিশনের হস্তক্ষেপ চলতেই থাকবে। ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর আইন শৃঙ্খলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠ ভাবে ভোট পরিচালনা করাই কমিশনের প্রধান দায়িত্ব। সে দিকে নজর রেখে জাতীয় কমিশনগুলির সদর্থক ভূমিকা পালন করা উচিত। কিন্তু, দুর্ভাগ্যের কথা তারা তা করছে না। তাছাড়া রাজ্য নির্বাচন কমিশন একটি স্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তা নয়। ফলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডিজি সোমবার কলকাতায় এলেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বা মুখ্য সচিবের সঙ্গে আদৌ সাক্ষাৎ হবে কি তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।