মহেশ্বর চক্রবর্তী
নব্যপ্রস্তর যুগ থেকেই পাথরের পর মাটির বাসনপত্র তৈরি করতে শেখে মানুষ। মানব সভ্যতা ধীরে ধীরে উন্নত হয়। তবে মাটির অন্যান্য পাত্রের সঙ্গে কলসি ও জালার চাহিদা ঠিক রয়েই গিয়েছে। আজও আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ট্যাপ যুক্ত মাটির জালার চাহিদা তুঙ্গে। গ্রীষ্মকাল এলেই মাটি কলসি ও জালার চাহিদা বাড়ে। গরমের প্রভাব যত বাড়ছে ততই মাটির তৈরি ট্যাপ যুক্ত জালার চাহিদা বাড়ে। হুগলি জেলার আরামবাগের কুমোড় পাড়ায় গিয়ে তারই বাস্তব চিত্র দেখা গেল। জানা গিয়েছে, আগে মাটির কলসি বিক্রি কমে গিয়েছিল। ক্রেতারাও অভিযোগ জানাতেন, বার বার হাত ডুবিয়ে জল তোলার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। আবার গড়িয়ে জল ঢালতে গিয়ে অনেক সময় ভেঙে যায়। তাই ট্যাপ যুক্ত মাটির কলসি তৈরি করা হয়। আরামবাগের কুমোড় পাড়ায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে এই মাটির কলসি বিক্রি হচ্ছে। প্রসঙ্গত, মাটির কলসিতে জল ঠান্ডা হওয়ার কারণ মূলত বাষ্পীভবন। যখন কোনও তরল পদার্থ বাষ্পীভূত হয় তখন তার উষ্ণতা হ্রাস পায়। বাষ্পীভবনের জন্য যে তাপের প্রয়োজন তা তরল পদার্থই সরবরাহ করে থাকে। তাপ হারানোর কারণে তরল পদার্থের উষ্ণতা কমে যায়। মাটির কলসি বানানোর সময় মাটির সঙ্গে খানিকটা বালি মেশানো হয় এবং এর গায়ে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। সেখান থেকেই মূলত বাষ্পীভন হয়ে জল ঠান্ডা থাকে। এই সব কথা মাথায় রেখে এর সঙ্গে ট্যাপ যোগ করা হয়। যাতে করে ঠান্ডা জল সহজেই গড়িয়ে খাওয়া যায়। এই বিষয়ে আরামবাগের দৌলতপুরের মাটির কলসি বিক্রেতা ললিত মাধব পাল জানায়, দূষণ বাড়ার জন্য এখন ফ্রিজের বদলে মাটির কলসিতে জল খাচ্ছেন মানুষ। চাহিদা বাড়ছে মাটির কলসির। প্রাচীন প্রথা ফিরে আসছে। দাম কম হলেও আরও বিক্রি হত। আট লিটার থেকে ৩০ লিটারের মাটির জালা বা ট্যাপ যুক্ত কলসি পাওয়া যায়। ক্রেতারা এখন মাটির কলসি বেশি কিনছে। সবমিলিয়ে গ্রীষ্মের দাবদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুমোড়পাড়ায় মাটির কলসি তৈরির জন্য শিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে।