সাপের কামড়ে মৃত্যু যুবকের, মৃতদেহের ওপর চলল ঝাড়ফুঁক

মালদা: বিষধর সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। মালদা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েও বাঁচানো সম্ভব হয়নি ওই যুবককে। কিন্তু চিকিৎসকেরা ওই যুবকের মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিলেও থেমে থাকেনি পরিবার। অন্ধবিশ্বাসের মতো মৃত যুবকের দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর চলে দীর্ঘক্ষণ ঝাড়ফুঁক। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ঝাড়ফুঁকের পরেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি ওই যুবককে। মালদা মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্ত না করেই জোর করে গোলমাল পাকিয়ে ওই যুবককে নিয়ে চলে এসেছিল মৃতের পরিবার বলে অভিযোগ। এরপরই পুরো বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। মৃতদেহটি পুনরায় উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে তদন্তকারী পুলিশকর্তারা। সোমবার সকালে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরকাদিরপুর এলাকায়। মৃত যুবকের পরিবার যে এখনও কুসংস্কারচ্ছন্ন রয়েছেন, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে মালদার বিজ্ঞান মঞ্চের কর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম মিঠুন মণ্ডল (২৩)। সে পুরাতন মালদার গৌড় কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। সোমবার ভোরে ঘুমানোর সময় বিছানার মধ্যে একটি বিষধর সাপ তার পায়ে কামড় দেয়। এরপর ওই যুবকের চিৎকার শুনে পরিবারের লোকেরা ছুটে আসেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাতে ওই যুবককে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। মেডিক্যাল কলেজের কর্তব্যরত একাংশ চিকিৎসকদের বক্তব্য, ওই যুবককে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আনতে অনেক দেরি করেছে পরিবারের লোকেরা। ফলে শত চেষ্টা করে চিকিৎসকেরা তাকে বাঁচাতে পারেনি।
এদিকে সোমবার সকালেই মৃত যুবককে ঝাঁড়ফুকের মাধ্যমে বাঁচানো সম্ভব বলেই দাবি করেন পরিবারের লোকেরা। এর পরই মেডিক্যাল কলেজ থেকে ময়নাতদন্ত না করে জোর করে ওই যুবককে ছাড়িয়ে আনেন মৃতের পরিবার। আর তা নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যাপক বচসা বেঁধে যায়। এরপর ওই যুবককে চরকাদিরপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসার পরই শুরু হয় গুণিনের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁকের কেরামতি।
মালদা মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা: পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই পরিবারটি কুসংস্কারের ফলেই ঝাড়ফুঁকের মতো কাজে যুক্ত হয়েছে। আসলে সাপে কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে অনেক দেরিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। ফলে শেষ চেষ্টা করেও ওই যুবককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার পিছনে মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে চিকিৎসার যে উদাসীনতার অভিযোগ তোলা হয়েছে তার সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এদিকে চরকাদিরপুর গ্রামের বাড়িতে সাপে কামড়ানোর মৃত যুবকের ঝাড়ফুঁক করা দৃশ্য দেখতে উপচে পড়ে গ্রামবাসীদের ভিড়। নানান কেরামতি করে গুণিন ওই যুবককে ঝাড়ফুঁক চালায়। কিন্তু শেষমেষ পরিস্থিতি ব্যাগতিক দেখেই কোনরকমে সেখান থেকে গা ঢাকা যায় ওই গুণিন। পরে পুরাতন মালদা থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুনরায় মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − eight =