নিজস্ব প্রতিবেদন, আসানসোল: রানিগঞ্জ ও ধানবাদের রেশ কাটতে না কাটতে কয়লা তুলতে গিয়ে কয়লাখনির ওভারবার্ডেন বা পাথর চাপা পড়ে মৃত্যু হল এক কিশোরের। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের জামুড়িয়া থানার ইসিএলের আওতাধীন এক বেসরকারি কয়লা উত্তোলনকারী সংস্থার খোলা মুখ খনিশিবডাঙা এলাকায়। আসানসোল পুরনিগমের ৯ নং ওয়ার্ডের জামুড়িয়া থানার জবা গ্রামের বাসিন্দা কিশোর সুদীপ টুডুর ১৪) মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, জামুড়িয়ার শিবডাঙা এলাকায় ইসিএলের আওতাধীন বেসরকারি ওপেন কাস্ট প্রজেক্ট বা খোলামুখ কয়লাখনি আছে। সেই ওসিপি থেকে ওভারবার্ডেন তুলে বাইরে রাখা হয়। সেই ওভারবার্ডেন থেকে আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা কয়লা বাছাই করে নিয়ে যায়। সেই রকম ভাবে এদিন সকালে বেশ কয়েকজন লোক সেই ওভারবার্ডেন থেকে কয়লা বাছাই করছিল। তাদের মধ্যে জবা গ্রামের ১২ বছরের সুদীপ টুডু ছিল। আচমকাই ওপর থেকে একটা বিশাল পাথর পড়ে। নীচে কয়লা বাছাই করা অন্যান্যরা পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও, সুদীপ টুডু সেই পাথরের তলায় চাপা পড়ে যায়। খবর পেয়ে আশপাশের লোকেরা দৌড়ে আসেন। তাঁরা কোনও মতে পাথর সরিয়ে সুদীপকে উদ্ধার করে। তাকে সঙ্গে সঙ্গে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে কোনও কর্মসংস্থান নেই। তাই বাধ্য হয়ে গরিব মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এইসব কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছে।’ অপরদিকে ঘটনার জন্য খনি কর্তৃপক্ষ ও তাদের নিরাপত্তারক্ষীদের দায়ী করে মৃত কিশোরের ক্ষতিপূরণের দাবিতে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ করে। তৃণমূল নেতা তথা আসানসোল পুর নিগমের মেয়র পরিষদ সুব্রত অধিকারীর দাবি, খনি কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি দাবি করেন, মৃতের বাবাকে চাকরি ও তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১২ অক্টোবর দুপুরে আসানসোলের রানিগঞ্জ থানার ইসিএলের নারায়ণকুড়িতে খোলামুখ খনি থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা তুলতে গিয়ে তিনজন মারা যান। এরপর সোমবার ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের নিরসা থানার ইসিএলের কাপাসারা খোলামুখ কয়লাখনিতে একই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়। তার জের কাটতে না কাটতে জামুড়িয়ায় এদিনের ঘটনা।