কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে ফের একবার উদ্বেগে ভারত। কারণ, ভারতে বিএফ-৭ এবং বি-১২-র মতো ওমিক্রনের ভ্যারিয়্যান্ট পাওয়া গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তা, ‘আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। কারণ, কোভিড এখনও শেষ হয়নি।’ এদিনের এই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে দেওয়া হয় একটি বিবৃতি। এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে মাস্ক পরার আর্জি জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিনের বৈঠকেই মাস্ক পরার বার্তা দিয়েছেন নমো।
বর্ষশেষের মুখে করোনার নয়া উপরূপ যে ভাবে চোখ রাঙাচ্ছে পড়শি দেশে, সেই প্রেক্ষিতে ভারতেও আবার মাস্ক পরার মতো কোভিডবিধি বাধ্যতামূলক করা হবে কি না, এ নিয়ে চর্চা চলছিল। চিন-সহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে যে ভাবে দাপট দেখাচ্ছে সংক্রমণ, তাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে বৃহস্পতিবার আবার দেশবাসীকে মাস্ক পরার জন্য আহ্বান জানালেন মোদি।
রাজ্যগুলিকে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অডিট করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সার্বিক কোভিড মোকাবিলা পরিকাঠামোর উচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রক্রিয়া এবং মানব সম্পদ সব দিক থেকে তৈরি থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এও জানান, ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং কোভিড পরীক্ষা বৃদ্ধির উপর জোর দিন, নজরদারি আরও জোরদার করুন।’ এরই রেশ ধরে বৈঠকে উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তাদের কোভিড পরীক্ষা এবং জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর সংখ্যাও বাড়াতে বলেন। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে প্রতিদিন ইনসাকগের জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষাগারগুলির যত বেশি সম্ভব নমুনা পাঠাতে বলা হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার, পিএসএ প্ল্যান্ট, ভেন্টিলেটর এবং মানব সম্পদ সহ হাসপাতালের পরিকাঠামোর আশানুরূপ প্রস্তুতি নিশ্চিত করার জন্য রাজ্যগুলিকে কোভিডের সুযোগ-সুবিধাগুলি পর্যালোচনা করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য জানান যে, চিনের পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের করোনা পরিস্থিতিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রাজ্যগুলিতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় স্তরে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারি এখনও শেষ হয়নি। কোভিড আমাদের শত্রু। সে প্রতিনিয়ত রূপ বদলাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের র্যান্ডম আরটি-পিসিআর স্যাম্পলিংও শুরু হয়েছে।’ কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্র প্রতিশ্রুতিবন্ধ বলেও এদিন সংসদে দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ, ‘চিন-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রীদের র্যান্ডম নমুনা পরীক্ষা করা হবে।’ এরই পাশাপাশি বৃহস্পতিবার সংসদে বিবৃতিতে বড়দিন এবং নববর্ষের উৎসবের মরশুমে আগের মতোই মাস্ক, স্যানিটাজার এবং দূরত্ববিধি মানার কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। এদিন কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সংসদের দুই কক্ষেই বিবৃতি দেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। লোকসভায় ওমিক্রনের নতুন সাব ভ্যারিয়্যান্ট বিএফ-৭ সময়মতো সনাক্ত করতে জিনোম-সিকোয়েন্সিং বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই দেশের কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সংক্রমণ তলানিতে ঠেকেছে। মৃত্যুর হারও কমেছে। তবে সম্প্রতি চিনে করোনার নয়া উপরূপের কারণে যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তা চিন্তা বাড়িয়েছে। এর পরই তৎপর হয়েছে মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৮৫ জন। করোনায় এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।