নয়াদিল্লি: গত কয়েকদিনে যেভাবে রাজধানী-সহ গোটা উত্তর ভারত যে ভাবে ঘন ঘন কেঁপে উঠছে, নেপালে ভূমিকম্প হয়েছে বড় ধরনের, তাতে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন ভূবিজ্ঞানীরা। ভূকম্প বিশেষজ্ঞেরা এই ধারাবাহিক কম্পন নিয়ে অনেক আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তাঁদের আশঙ্কা, ভূগর্ভে ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান প্লেনের ঠোকাঠুকি ভালো মতোই চলতে শুরু করছে। হিমালয় অঞ্চলের গভীরে টেকটনিক প্লেটে ঠোকাঠুকি হচ্ছে যার ফলে ভবিষ্যতে আরও বড় ভূকম্পের সম্ভাবনা আছে।
ভূকম্পন বিশেষজ্ঞদের দাবি, হিমালয়ের নীচে ভূকম্পন বলয় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যার জেরে ভারতীয় পাতের সঙ্গে ইউরেশীয় পাতের ঝামেলা শুরু হয়েছে। যার ফল স্বরূপ দিল্লি বা উত্তর-পশ্চিম ভারত শুধু নয়, গোটা দেশেই ভয়ানক ভূমিকম্প হতে পারে যখন তখন। বিশেষ করে হিমালয় এলাকায় যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে।
গোটা উত্তর-পশ্চিম ভারত দাঁড়িয়ে রয়েছে এমন একটি ‘কম্পন অধ্যুষিত’ অঞ্চলে যাকে ভূকম্প বিশেষজ্ঞেরা ‘হটস্পট’ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ এই অঞ্চলে ঘনঘন রিখটার স্কেলে ৪, সাড়ে ৪, ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েই থাকে।
তার মধ্যে উত্তর-পশ্চিম হিমালয় তুলনামূলক ভাবে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ। ওই অঞ্চলে ভূমিকম্প সব সময় হয়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছর দুয়েক ধরে নেপালে পরপর যে সব ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে গোটা হিমালয়ের ভূস্তর আরও অস্থির হয়ে গিয়েছে। এর ফলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের পরেও শক্তিশালী ভূমিকম্পোত্তর কম্পন (আফটার শক) অনুভূত হচ্ছে। ভূকম্পন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইন্ডিয়ান প্লেটের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের কারণেও ভূগর্ভে ‘চ্যুতি’ তৈরি হচ্ছে। এই রেষারেষির সময়ে ইন্ডিয়ান প্লেটটি যখনই ইউরেশীয় প্লেটের নীচে ঢুকে যাচ্ছে, তখন মাটির নীচে বিশাল পরিমাণ শক্তি মুক্ত হচ্ছে। আর সেই নির্গত শক্তির পরিমাপ কতটা, তার উপরে নির্ভর করছে ভূমিকম্পের মাত্রা। ফলে যে কোনও সময়েই বড়সড় ভূমিকম্প হতে পারে।
ভূমিকম্পের আশঙ্কা কোথায় কতটা, এই ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পাঁচ নম্বর জোনে রয়েছে সর্বাধিক ভূমিকম্প প্রবণ বলে চিহ্নিত জোন। উত্তর-পূর্ব ভারত ছাড়াও উত্তরাখণ্ড, বিহার, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাতের কিছু অংশ এই জোনের আওতায় পড়ছে। ভূমিকম্প বেশি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে ৪ নম্বর জোনেও। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, সিকিম, গুজরাত, পাঞ্জাব, লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, ছাড়াও উত্তরবঙ্গের প্রায় পুরো অংশ এবং দক্ষিণবঙ্গের কিছু অংশ এই জোনের মধ্যে পড়ছে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, ভূপ্রাকৃতিক গড়ন এবং নগরায়ণ যে ভাবে বদলেছে, তাতে ভূমিকম্পের বিপদ ঠিক মতো আঁচ করতে হলে কোনও শহরকে কয়েকটি ছোট ছোট এলাকায় ভাগ করে সমীক্ষা করা উচিত।