কালিয়াগঞ্জ কাণ্ডে প্রাথমিক রিপোর্ট গ্রহণ করল না আদালত, চাওয়া হল পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট

কালিয়াগঞ্জ কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য পুলিশ। অস্বস্তি বাড়ল শাসকদলের। আদালত সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার কালিয়াগঞ্জে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট গ্রহণ করল না হাইকোর্ট।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াগঞ্জ কাণ্ডে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে মামলার শুনানির সময় রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে। তবে সে রিপোর্ট গ্রহণ করেননি বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। একইসঙ্গে বিচারপতি মান্থা জানান, তদন্ত দ্রুত শেষ করতে হবে পুলিশকে। তারপরে সেই রিপোর্ট দেখেই আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। রাজ্য ‘ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির’ থেকে যে রিপোর্ট আসার কথা তা দ্রুত আনানোর ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি আইনজীবীকে নির্দেশ দেন বিচারপতি।
এর আগে কালিয়াগঞ্জে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। পাশাপাশি এই মামলায় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তের আর্জিও জানানো হয়।
প্রসঙ্গত গত এপ্রিল মাসে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কালিয়াগঞ্জ। একটি পুকুরের ধার থেকে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়। তাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ তোলেন ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা। এরই পাশাপাশি ওই ছাত্রীর দেহ পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। পুলিশকে লক্ষ্য করে হয় ইটবৃষ্টি, পাল্টা লাঠিচার্জও হয়। পুলিশ রীতিমতো টেনে হিঁচড়ে ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। দেহ উদ্ধারের ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই বিতর্ক ছড়ায়। পরের দিন সমগ্র ঘটনায় কালিয়াগঞ্জ থানায় বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। কালিয়াগঞ্জ থানায় আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকী কয়েকজন পুলিশকর্মীকে এক জায়গায় বেঁধে রেখে লাঠি দিয়ে পেটায় উত্তেজিত জনতা।
এই ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার কড়া নিন্দা করেন। থানায় আগুনের ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। সেই রাতেই কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা বিষ্ণু বর্মনকে গ্রেপ্তার করতে বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। মধ্যরাতে পুলিশ গ্রামে যায় বলে অভিযোগ। সেদিন বিষ্ণুর বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। জানা গিয়েছে, ঘটনার সময়ে বিষ্ণু বাড়ি ছিলেন না। তাঁর বাবাকে ধরে নিয়ে যেতে চায় পুলিশ। তখনই নিহত যুবক মৃত্যুঞ্জয় বর্মন যিনি সম্পর্কে বিষ্ণুর খুড়তুতো ভাই তিনি পুলিশের সামনে রুখে দাঁড়ান। অভিযোগ, তখনই পুলিশ গুলি চালিয়ে দেয়। গুলি এসে লাগে মৃত্যুঞ্জয়ের বুকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বর্মন পরিবার সূত্রে খবর, মৃত্যুঞ্জয় শিলিগুড়িতে থাকতেন। তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। পরিবারের দাবি, কালিয়াগঞ্জে থানায় বিক্ষোভ কিংবা মূল ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনওভাবেই যুক্ত ছিলেন না। সেই মামলাতেই পুলিশের রিপোর্ট গ্রহণ করল না পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × four =