কলকাতা : “পুজো কমিটিগুলোকে কম করে ১০ লাখ টাকা দিন, ৮৫ হাজার টাকায় কী হয়? ৮৫ হাজার টাকায় প্যান্ডেল বা পুজোর কোনও কাজ হওয়া সম্ভব নয়। এই টাকায় খুব বেশি হলে একটা তাবু বানানো যেতে পারে। না হলে কার্যকরী কমিটির সদস্যদের কাজে লাগতে পারে’’।
তীব্র শ্লেষ করে সোমবার এই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। এই সঙ্গে, দুর্গাপুজোয় অনুদানের টাকার খরচের হিসাব পুজো কমিটিগুলি দিচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখে সিএজি (কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলকে)-কে রিপোর্ট পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
দুর্গাপুজোয় রাজ্য সরকারের অনুদানের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থ মামলা করেন দুর্গাপুরের বাসিন্দা সৌরভ দত্ত। পুজো কমিটি পিছু অনুদান ৭০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এবার ৮৫ হাজার টাকা করেছে রাজ্য সরকার। জনগণের করের টাকায় কেন পুজোয় অনুদান? এই প্রশ্ন তুলে দায়ের হয় মামলা।
সোমবার হাইকোর্ট রাজ্যকে কার্যত ব্যঙ্গ করে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমি ২ বছর পুজোয় ঘুরে দেখেছি যে এই টাকায় কিছু হয় না। অনুদানের টাকা কমপক্ষে ১০ গুণ বাড়ানো হলে সেটা পুজোর কাজে লাগতে পারে। রাজ্যে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য সরকার ১ হাজার টাকা দেয়। তাঁদের আরও বেশি প্রয়োজন, সরকারের বিবেচনা করলে ভাল হয়’। সিলিকোসিসে আক্রান্তদের ব্যাপারে রাজ্য উদাসীন। এই ধরনের অনেক ক্ষেত্রে আদালত একাধিক নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্যের উচিত সেগুলি বিবেচনা করা।’
প্রধান বিচারপতি বলেন , ‘২৩ বছর কাজ করে সর্বোচ্চ ২৩ হাজার টাকা নিয়ে কর্মীরা অবসর নিচ্ছেন। আমার কাছে পূর্ত দফতরের কিছু কর্মী দাবিপত্র জমা দিয়েছিলেন। ২৫ জন এইরকম কর্মীকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মামলাকারীর আবেদন, গত কয়েক বছরে কোন কোন পুজো কমিটি রাজ্যের থেকে পাওয়া অনুদানের খরচের কোনও হিসাব দেয়নি তা খতিয়ে দেখতে সিএজি-কে খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিক আদালত। মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, ‘প্রতি বছর দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে অনুদান দিয়ে জনগণের করের টাকা অপচয় হচ্ছে। অনুদেওয়া অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, “এই মুহূর্তে অনুদানের টাকা দেওয়া হয়ে গেছে, তাই আটকানোর নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়’’। সব পক্ষকে হলফনামা আদানপ্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।”
প্রসঙ্গত, এ বছর পুজোর জন্য ক্লাব পিছু ৮৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে রাজ্য। আগের বছর এই অনুদান ছিল ৭০ হাজার। ৪৩ হাজারের বেশি ক্লাবকে ৮৫ হাজার করে রাজ্য সরকারি অনুদান দেয়। এ বছর বেশ কিছু পুজো কমিটি আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে অনুদান না নেওয়ার ঘোষণা করেন। সেই প্রেক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁরা টাকা নিতে চান না, তাঁদের টাকা নতুন আবেদনকারীদের দেওয়া হোক।
২০২৫-এ পুজো কমিটি পিছু অনুদান দেওয়া হবে ১ লক্ষ টাকা বলে আগেই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া ফায়ার লাইসেন্স-সহ সমস্ত সরকারি ফি মকুবের ঘোষণা বহাল থাকছে এ বছরও। বিদ্যুতের দামে ৭৫ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।