একবছর ধরে পড়ে রয়েছে দেহ, গোত্র ভিন্ন বলে সৎকার নয়, হাই কোর্টে জানালেন আত্মীয়া

নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা: অর্থমনর্থম! অর্থাত্ অর্থই অনর্থের কারণ।

নিকট আত্মীয়ের সম্পত্তি পাননি। তাই গোঁসা! গোত্র ভিন্ন তাই সৎকার করবেন না, আদালতে জানিয়ে দিয়েছিলেন বৃদ্ধার আত্মীয়। মৃত্যুর এক বছর পর সেই মামলায় প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, অবিলম্বে সৎকার করতে হবে। প্রয়োজনে সৎকার করবে রাজ্য। সম্ভব হলে ময়নাতদন্ত করা হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। পাশাপাশি, আত্মীয়ের যাবতীয় অভিযোগ বাতিল করে, যিনি দেখভাল করতেন তাঁর ওপরেই আস্থা রাখল আদালত। তবে এই টানা পোড়েনে এক বছর ধরে লাশকাটা ঘরে পড়ে কাটোয়ার বাসিন্দা রমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেহ।

তাঁর সম্পত্তির অধিকার ও শেষকৃত্য করা নিয়ে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে চলছিল শুনানি।কাটোয়ার বাসিন্দা রমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। মামলার জেরে আটকে আছে শেষকৃত্য। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ছিল সেই মামলা। তিনি এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন বিচারপতি।

কেন হল না সৎকার? কারণ বৃদ্ধার নিকট আত্মীয় মায়া মজুমদার একটি মামলা করে দাবি করেছিলেন রমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির উত্তরাধিকারী তিনি। অথচ তাঁর বদলে রমা দেবীর পরিচিত নুর হক মল্লিক যাবতীয় সম্পত্তি পেয়েছেন। মায়া মজুমদারের অভিযোগ, সম্পূর্ণ মিথ্যা উপায়ে ওই সম্পত্তি পেয়েছেন নুর হক। কী ভাবে রমাদেবীর মৃত্যু হল, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন মায়া মজুমদার।

প্রধান বিচারপতি এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন। কারণ ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নুর হক, রমা দেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করান। দু’দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার কথা মায়াদেবীকে এসএমএস করে জানিয়েছিলেন নুর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও রমা দেবীর মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে জানায়। সেই সঙ্গে এও জানা যায়, মায়া মজুমদার একদিনও রমাদেবীকে দেখতে আসেননি হাসপাতালে। অন্য দিকে, রাজ্য জানায় প্রায় ন’বছর ধরে রমা দেবীর দেখভাল করতেন নুর হক ও তাঁর পরিবার। সম্পত্তি নিয়ে এর আগেও অন্য মামলায় রমাদেবী নিজেই জানিয়েছিলেন নুরকেই যাবতীয় অধিকার দিতে চান তিনি।যাবতীয় বিষয় বিচার করে এ দিন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, কাটোয়া মেডিক্যাল কলেজে যেখানে এখনও মৃতার দেহ রাখা আছে, তা সম্ভব হলে ময়নাতদন্ত করা হবে। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের দিয়ে একটি টিম বানানো হবে, যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নেবেন। আদালতের নির্দেশ, কেউ এগিয়ে না এলে সৎকার করতে সাহায্য করবে রাজ্য। রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘গোত্র ভিন্ন বলে সৎকার করার ইচ্ছা নেই মামলাকারীর। এই বয়ানের তীব্র বিরোধিতা করেছি। নিজের জীবনে বহু সৎকার দেখেছি, এমন আজব নিয়ম শুনিনি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − three =