কলকাতা: অধ্যাপিকা হয়ে কেন স্বল্প কাপড়জামায় ছবি দেবেন? কেন বিকিনি পরবেন? তাই নিয়ে হইহই কাণ্ড! ছাত্রের হাতে অধ্যাপিকার বিকিনি পরা ছবির স্ক্রিনশট এসে পড়ায় সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করেছে তাঁর বাবা। ইতিমধ্যেই অধ্যাপিকার চাকরিও গিয়েছে। যদিও তাঁর ছবি ওই ছবি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আগের। তাছাড়া তা মাত্রা ২৪ ঘণ্টার জন্য ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে দেখা গিয়েছে। তারপর আপনা থেকে ডিলিটও হয়ে গিয়েছে।
তবে এই বিকিনি কাণ্ডই এবার ঝড় তুলল। সোশ্যাল মিডিয়ায় অধ্যাপিকার বক্তব্যকে সমর্থন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মনোবিদ থেকে অভিনেত্রী ও ভিন্ন পেশার নারীরা। উদ্দেশ্য একটাই- গোঁড়ামিতে আঘাত হানা। গত দু’দিন ধরে ‘টেক দ্যাট জেভিয়ার্স’ #takethatxaviers হ্যাশট্যাগে রীতিমত উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী রত্নাবলী রায়, মনোবিদ পয়োষ্ণি মিত্র, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী তথা একদা এসএফআই নেত্রী অনিশা পাল থেকে অভিনেতা বিদীপ্তা চক্রবর্তী প্রমুখ সুইমশুট পরা ছবি দিয়ে তাঁদের মন্তব্য পোস্ট করেছেন।
বুধবার ফেসবুকে এই প্রচার অভিযান শুরু করেন রত্নাবলী। স্যুইমস্যুট পরা নিজের একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘কাঁচকলা। কাঁচকলা। ব্যক্তি শিক্ষকের পোশাক ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিড়ম্বনার বিষয় হয় না, এটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানি। যে কর্তৃপক্ষ এই কথা বোঝেন না, তাঁদের শিক্ষার পরিধি বাড়ানো দরকার।’
এখানেই না থেমে রত্নাবলী বলেন, ‘সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটির এই নিন্দনীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সকলেই নিজের স্যুইমস্যুট পরা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করুন।’ সবশেষে লেখা হ্যাশট্যাগ ‘টেক দ্যাট জেভিয়ার্স’।
রত্নাবলীর এই আহ্বানের পরেই এগিয়ে আসেন নেটিজেনরা। নিজেদের বিকিনি কিংবা স্যুইমস্যুট পরা ছবি পোস্ট করে এই প্রতিবাদে সামিল হন অনেকেই। নিজের বিকিনি পরা ছবি পোস্ট করেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী তথা একদা এসএফআই নেত্রী অনিশা পাল। ফ্রেঞ্চ কবি হেলেন সেক্সাসের একটি লেখা কোট করে তিনি লেখেন, ‘দেহের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো মানেই দমবন্ধ হয়ে আসা, বাকস্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া। নিজের কথা লিখুন, আপনার শরীরের ভাষাও যেন শোনা যায়।’ এরপর তিনি লেখেন, ‘রত্নাবলী রায়কে ধন্যবাদ, এই বার্তাটি স্পষ্ট করে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।’ শেষে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা ‘টেক দ্যাট জেভিয়ার্স’।
মনোবিদ পয়োষ্ণি মিত্র তাঁর মা ও মেয়ের সঙ্গে সমুদ্রস্নানের সময় তোলা একটি ছবি পোস্ট করেন ফেসবুকে। সেখানে লেখেন, ‘স্যুইম স্যুটে আমরা তিন প্রজন্ম। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতেও নিজেদের ছবি পোস্ট করতে ভালোবাসি! শীঘ্রই আরও ছবি পোস্ট করব।’
এগিয়ে আসেন অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী ও তাঁর বড় মেয়ে মেঘলা দাশগুপ্তও। হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখেন, ‘মাই বডি মাই রাইটস’ অর্থাৎ আমার শরীরে আমার অধিকার। ক্ষোভের আগুনে যেন ঘৃতাহুতি পড়েছে। নিজের শরীরে যে অন্য কারও অধিকার নেই, সেই কথাই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন নেটিজেনরা।
আর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে অধ্যাপিকা বলছেন, ২০২১ সালের অগস্ট মাসে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। যে ছবিগুলি দেখিয়ে তাঁর দিকে আঙুল তোলা হয়েছে, সে ছবিগুলি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার বেশ কয়েক মাস আগে পোস্ট করেছিলেন, ইনস্টাগ্রামের স্টোরি হিসেবে। তাঁর অ্যাকাউন্টটি প্রাইভেট, সকলে সব দেখতে পান না। তাছাড়া ইনস্টাস্টোরি এমনিতেও ২৪ ঘণ্টা পরে ডিলিট হয়ে যায়।
অধ্যাপিকার প্রশ্ন, ওই অতদিন আগের ডিলিট হওয়া ইনস্টাস্টোরির স্ক্রিনশট কী করে ছাত্রের হাতে পৌঁছল? তা দেখে ছাত্রের বাবা কেনই বা অভিযোগ দায়ের করলেন? অভিযোগ পাওয়ার পরে কেনই বা কোনও তদন্ত না করেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?