জঙ্গি হামলার স্মৃতি উস্কে সংসদ ভবনে দুই যুবকের হানা, ধোঁয়ায় ছড়াল আতঙ্ক

২০০১ সালে ১৩ ডিসেম্বরে সংসদে জঙ্গি হামলার স্মৃতি উস্কে দিল ২০২৩। লোকসভার গ্যালারি থেকে চেম্বারের ভিতর ঝাঁপিয়ে পড়লেন দুই যুবক। বিশেষ কোনও রাসায়নিক স্প্রে করে চারদিক ধোঁয়ায় ভরিয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় তখন তুমুল শোরগোল। যে যেদিকে পারছেন মাথা নিচু করে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করছেন। জঙ্গি হানা হয়েছে বলে মুহূর্তের মধ্যে মনে ভেবেও নিয়েছিলেন কেউ কেউ।

তবে তেমনটা না হলেও বুধবারের ঘটনায় সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। দুই যুবক লোকসভায় ঢুকে ‘রং বোমা’ ছোড়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তাঁদের আটক করা হয়েছে।

২২ বছর আগে সংসদে হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে বুধবারের ঘটনা। এর আগে ২০০১ সালে এই ১৩ ডিসেম্বরেই সংসদে জঙ্গি হামলা হয়েছিল।

বুধবার লোকসভার শীতকালীন অধিবেশন চলছিল। আচমকা ভরা সংসদ ভবনে দর্শকাসন থেকে ঝাঁপ দেয় ২ জন। জুতো থেকে বের করে বিশেষ কোনও রাসায়নিক স্প্রে করে চারদিক ধোঁয়ায় ভরিয়ে দিয়ে তাঁরা ঝাঁপ দেয় বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই দুজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ঘটনার জেরে দুপুর ২টো পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে সংসদের অধিবেশন। সূত্রের খবর, সংসদ ভবনের বাইরেও একই কাণ্ড ঘটিয়েছে কয়েকজন। তাদের উদ্দেশ্য এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান দিতে দিতে ঝাঁপ দেয় ওই ২ জন। এই স্লোগানের অর্থ, “স্বৈরতন্ত্র চলবে না”। ঘটনার জেরে সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

পুলিশ যে দুজনকে হেফাজতে নিয়েছে তাদের মধ্যে একজনের নাম আমন শিন্ডে। আর একজন হলেন নীলম সিনহা। দুজনে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।  এই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে সংসদ ভবনের নিরাপত্তা। সংসদ ভবনে কোনও এক-আধজন নন, থাকে সশস্ত্র পাহারার ব্যবস্থা। থাকেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ রক্ষী-আধিকারিকরা। দুজনে সাধারণ মানুষ কীভাবে সেই নিরাপত্তার বেড়াজাল টপকে ভেতরে ঢুকলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

ঘটনাক্রমে, এই বুধবারই সংসদ হামলার ২২ বছর পূর্তি! ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর আচমকাই নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে পুরনো সংসদ ভবনের ভিতরে ঢুকে পড়েছিল ৫ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী। অধিবেশন চলাকালীন তারা এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। সেই হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৬জন আধিকারিকের, সংসদের ২ নিরাপত্তা কর্মী এবং বাগানের একজন মালির। নিরাপত্তারক্ষীদের পাল্টা গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছিল ৫ জন দুষ্কৃতীরই।

সেই ঘটনায় শুরু হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান তরজা। ভারতের অভিযোগ ছিল, এই হামলার ঘটনায় জড়িত রয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবার দিকে। যদিও পাকিস্তানের তরফে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। লস্কর-ই-তৈবাও ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে। তারপর দুই দেশের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়, এবং শেষমেশ যুদ্ধ শুরু হয়।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =