ডন ব্র্যাডম্যানের জীবনের শেষ ইনিংসে শূন্য রানের ফেরার সম্পর্কে যে মিথ আছে তা হল জীবনের শেষ বল খেলার সময় চোখে জল এসেছিল বলে বলটা তিনি ঠিকমত দেখতেই পাননি৷ আজও কি মোতেরা স্টেডিয়ামে তারই পুনরাবৃত্তি দেখলাম৷ সদর্পে এগিয়ে গেলেন দলের হাত ধরতে, বহু যুদ্ধের নায়ক, বহু অসম লড়াইকে সহজে জিতে আসা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি৷ কিন্তু প্রথম বলেই সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেললেন৷ এবং আউট৷ সারা মাঠ নিস্তব্ধ৷ সকলেরই চোখে জল৷ ক্যামেরা জুম করতেই দেখা গেল, মাথা নিচু করে বসে ভারতের অন্যতম সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক ‘ক্যাপ্টেন কুল’৷ তিনি চিরদিনই জয়-পরাজয়ে নির্বিকার থেকেছেন৷ অতিরিক্ত আবেগ বা উচ্ছ্বাস কখনই তাকে গ্রাস করতে পারেনি৷ কিন্তু তাকে দেখে কেন যেন আজ ডন ব্র্যাডম্যানের কথা মনে পড়ে গেল৷ অম্বাতি রায়াডু আউট হতেই মাঠে ঢুকলেন। মোতেরার গ্যালারিতে তখন তুমুল আলোড়ন। সারা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়েছেন স্বাগত জানিয়েছেন মাহিকে। এমনই পরিস্থিতি তো দরকার ছিল নায়কের জন্য। জীবনের শেষ ম্যাচ একাই জিতিয়ে দেবেন টিমকে। ক্রিজ পর্যন্ত আসার সময় ধোনিকে দেখে বদ্ধপরিকর মনে হচ্ছিল। যেন ২০১১-র সেই ওয়াংখেড়ের রাত ফেরাবেন। সে বার করেছিলেন দেশের জন্য, এবার সিএসকের জন্য। তিরিশের তারুণ্য আর ৪২-এর বুড়োর মধ্যে ফারাক অনেক। ধোনি পারলেন না। মাঠে তখন অবিশ্বাস্য ম্যাচ জেতাচ্ছেন রবীন্দ্র জাডেজা। ধোনির সেদিকে চোখই নেই। তিনি বসে রয়েছেন মাথা নীচু করে। অব্যক্ত যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে মুখে। খেলা যাই হোক না কেন, চ্যাম্পিয়নদের এই এক অদ্ভুত রসায়ন। মহাতারকা শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে রাখতে চান মায়াজাল। যেদিন পারেন না, সেদিন সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় তাঁরই। ধোনি পারলেন না। সত্যিই কি তাই? বরং বলা উচিত, ধোনি পারলেন। ক্রিকেট নিয়ম, হিসেব, বয়সের উর্ধ্বে নয়। কেউ কেউ পারেন এই নিয়ম, হিসেব আর বয়সের বেড়াজাল ভেঙে ফেলতে। হাঁটুর চোট বারবার তাঁকে বিব্রত করেছে। তবু উইকেটের পিছনেই দাঁড়িয়েছেন তিনি। নির্দ্বিধায় নিয়েছেন ডিআরএস, পলকে উড়িয়েছেন স্টাম্প, কিছু বোঝার আগেই বিপক্ষ জেনেছে, ম্যাচ আর তাঁদের নয়। ঠিক ফাইনালটা যেমন। ধোনি পারলেন। ধোনিই পারলেন। ৪২-এও খুব সহজেই একটা টিমকে চ্যাম্পিয়ন যে করা যায়, ধোনি দেখিয়ে গেলেন। আমাদের উপহার দিয়ে গেলন স্বপ্নে মোড়া এক আশ্চর্য পৃথিবী৷ সেলাম ‘ক্যাপ্টেন কুল’ সেলাম৷