অস্ট্রেলিয়ান তারকা পেসার মিচেল স্টার্ক আচমকাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন। ৩৫ বছর বয়সি বাঁহাতি এই পেসার জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছরের ব্যস্ত টেস্ট সূচি এবং ২০২৭ সালের ওয়ান ডে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিই তাঁর এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ। তিনি চান টেস্ট এবং ওয়ান ডে ফরম্যাটে সতেজ ও সেরা অবস্থায় খেলতে। তাই ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটকে বিদায় জানালেন স্টার্ক। স্টার্ক শেষবার টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপে। কিন্তু সেই টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া প্রত্যাশামতো পারফর্ম করতে পারেনি, ব্যক্তিগতভাবেও সেরা ছন্দে ছিলেন না স্টার্ক। তবে তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার কিন্তু উজ্জ্বল। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনি মোট ৬৫টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৭৯টি উইকেট সংগ্রহ করেছেন। ইকোনমি রেট ৭.৭৪—যা তাঁর ধারাবাহিক সাফল্যের প্রমাণ। দেশের হয়ে তিনি পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন, শুধুমাত্র ২০১৬ সালের আসরে চোটের কারণে খেলতে পারেননি। বিশেষ করে ২০২১ সালে দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক বিশ্বকাপজয়ের সময় স্টার্ক ছিলেন দলের অন্যতম ভরসার জায়গা। অবসরের ঘোষণায় স্টার্ক জানিয়েছেন, “টেস্ট ক্রিকেট সবসময়ই আমার কাছে প্রথম অগ্রাধিকার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রতিটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা ছিল গর্বের। বিশেষ করে ২০২১ বিশ্বকাপ আমার কাছে চিরস্মরণীয়। তবে সামনেই ভারত সফর, তারপরে অ্যাশেজ এবং আরও বড় লক্ষ্য ২০২৭ সালের বিশ্বকাপ। এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়ালে আমি সতেজ থাকতে পারব এবং দলের অন্যান্য পেসাররা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য সুযোগ পাবে।” অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সূচি আগামী কয়েক মাসে অত্যন্ত ব্যস্ত। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে তাদের সামনে রয়েছে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ভারতের সফর। এরপর আসছে মর্যাদাপূর্ণ অ্যাশেজ সিরিজ এবং ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। তাই স্টার্কের এই সিদ্ধান্ত অনেকটা বাস্তবসম্মত বলেই মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান জর্জ বেইলি জানিয়েছেন, “টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে স্টার্কের অবদান অসাধারণ। তিনি ২০২১ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। তাঁর অন্যতম গুণ ছিল ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা। তিনি যতদিন টেস্ট ও ওয়ান ডেতে খেলবেন, আমরা সেটি উদযাপন করব।” স্টার্কের অবসরের দিনেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। ক্যামেরন গ্রিনকে শেফিল্ড শিল্ডে খেলার জন্য বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, নাথান এলিস ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে চোট কাটিয়ে ফিরেছেন ম্যাট শর্ট ও মিচেল ওয়েন। অলরাউন্ডার মার্কাস স্টোইনিসও নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ফিরেছেন দলে। সব মিলিয়ে বলা যায়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম ভরসা ছিলেন মিচেল স্টার্ক। তাঁর বল হাতে বিধ্বংসী ইন-সুইং এবং নির্ভরযোগ্য ডেথ ওভার বোলিং বহু ম্যাচে দলকে এগিয়ে দিয়েছে। যদিও এই ফরম্যাটকে বিদায় জানালেন তিনি, তবুও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে তাঁর অবদান অমলিন থাকবে। এখন তাঁকে দেখা যাবে টেস্ট এবং ওয়ান ডেতে, যেখানে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় আরও বহুবার দলের হয়ে ম্যাচ জেতাতে পারবেন।

