ব্যারাকপুর: দিকে দিকে যখন স্কুল, শিক্ষক নিয়ে হাজারও অভিযোগ, তখন অন্য ছবি দেখেছেন ভাটপাড়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। সন্তান স্নেহে পড়ুয়াদের আগলেছেন বর্তমান টিচার ইন চার্জ। ছোট্ট সাধারণ স্কুলে অল্প পড়ুয়াদের নিয়েও, কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করেছেন সর্বদা।
আর তাই মানুষটি হয়ে উঠেছেন পড়ুয়া থেকে অভিভাবক সকলেরই কাছেই পরম শ্রদ্ধার মাস্টারমশাই। যাঁর ওপর অভিভাবকরা ভরসা করতে পারেন। সেই শিক্ষকেরই বদলির নির্দেশ এসেছে।আর তাতেই মন খারাপ পড়ুয়া থেকে অভিভাবকদের।তাঁকে যেতে দিতে নারাজ সকলেই। অনেকেরই চোখে জল। স্যারের বদলি আটকাতে শনিবার বিক্ষোভ দেখানোর পর সোমবার স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিলেন অভিভাবকরা।
১৩ বছর ধরে রবীন্দ্রপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ২০১৮ সাল থেকে স্কুলের টিচার-ইন-চার্জের পদও সামলাচ্ছেন।মাস্টারমশাইকে সকলেই ভালোবাসেন।
এমনিতে পড়ুয়ার অভাবে ধুঁকছে ভাটপাড়া চক্রের একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। অথচ এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১২৪ জন। এখানে রয়েছেন চার জন শিক্ষক। সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁদেরই মধ্যে খুব জনপ্রিয়। কিন্তু আচমকা স্যারের বদলির খবরে মুষড়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। টিচার-ইন-চার্জকে অন্য স্কুলে বদলি আটকাতে শনিবার অভিভাবকেরা স্কুলে জমায়েত হয়ে দীর্ঘক্ষন বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সোমবার স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন অভিভাবকরা। বিক্ষোভের মাঝে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের চোখে জল নেমে আসে। অভিভাবক শান্তি নাথ বলেন, ‘সুব্রতবাবুর হাত ধরেই স্কুলের উন্নয়ন হয়েছে। নিজের সন্তানের মতো বাচ্চাদের উনি ভালোবাসেন। কোনও কারণ ছাড়াই শিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে অন্য স্কুলে বদলি করা হচ্ছে।’ স্পষ্টতই জানান এই সিদ্ধান্ত তাঁরা কিছুতেই মানতে পারছেন না। আর এক অভিভাবিকা প্রিয়াঙ্কা রায় জানান, টিচার-ইন-চার্জ সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বদলির খবর শুক্রবার তাঁরা জানতে পেরেছেন। কিন্তু ওনি চলে গেলে এখানকার পঠন-পাঠন শিকেয় উঠবে। বাচ্চারাও স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। স্যার সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে নিজের কর্তব্য পালন করেছি মাত্র।এই স্কুলে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। আমাকে ভাটপাড়ার শতদল প্রাথমিক স্কুলে বদলি করা হয়েছে।’ সুব্রতবাবুর কথায়, বাচ্চাদের পাশাপাশি অভিভাবকদের আবেগকেও তিনি সম্মান জানাচ্ছেন। কিন্তু স্কুলে তালা ঝোলানো ঠিক কাজ নয়।