রাজ্য সরকার বা সরকারি পোষিত স্কুলের শিক্ষকেরা করতে পারবেন না প্রাইভেট টিউশন, নির্দেশ আদালতের

রাজ্যে সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন আদৌ বৈধ কি না তা নিয়ে তরজা চলেছে বহুকাল ধরেই। কারণ, এক অংশের অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রাইভেট টিউশন করাতে গিয়ে সঠিক ভাবে স্কুলে ক্লাস নেন না শিক্ষকেরা। পাশাপাশি কোথাও একটা লুকিয়ে থাকে পক্ষপাতিত্বও। কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ, রাজ্যে সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন আদৌ বৈধ নয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিধি ভেঙে প্রাইভেট টিউশনে যুক্ত স্কুলশিক্ষকদের বিরুদ্ধে পর্ষদ ও সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তা না হলে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতই পদক্ষেপ করবে বলে নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ।
এই প্রসঙ্গ আদালতে ওঠে, প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলায়।
প্রসঙ্গত, সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন অবৈধ বলে আগেও নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে আইনজীবী একরামুল বারি আদালতে জানান, মধ‌্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে ২০১৮ সালে জারি করা রুল অনুসারে, পর্ষদের আওতাধীন স্কুলে কর্মরত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের প্রাইভেট টিউশন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু স্কুলের একশ্রেণির শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছে প্রাইভেট টিউশন নিতে বাধ্য করেছেন। এমনকী অনেকেই বিভিন্ন প্রাইভেট ইনস্টিটিউটেও পড়াচ্ছেন। এটা আইনত অপরাধ।’ পর্ষদের তরফে আইনজীবী বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
আদালতের এই নির্দেশ প্রসঙ্গে শিক্ষকদেরই একাংশের বক্তব্য‘স্কুল শিক্ষকদের আচরণবিধিতে স্পষ্ট ভাষায় লেখা রয়েছে, গৃহশিক্ষকতা করা যাবে না। প্রধান শিক্ষক হিসাবেও আমি সবসময় মনে করি দায়বদ্ধতাটা ক্লাসে পড়ানোর প্রতিই থাকা উচিত। তাই স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা বন্ধে তাঁরা পূর্ণ সহমতও পোষণ করেন। পাশাপাশি এই যুক্তিকে সিলমোহর দিয়ে একাংশকে এও বলতে শোনা যায়, নৈতিক দিক থেকে সত্যিই স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা করা উচিত নয়।  একজন স্কুলশিক্ষকের প্রথম প্রচেষ্টা হবে, তিনি যে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন, সেখানকার বাচ্চাদের তৈরি করা। তাই ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতাটাকে নৈতিকভাবে সমর্থন করা উচিত নয়, অন্তত যতদিন তিনি চাকরিতে রয়েছেন।
এদিকে মামলাকারী প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ‌্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক দীপঙ্কর দাস জানান, ‘আমি সমস্ত গৃহশিক্ষক ও গৃহশিক্ষিকাদের উদ্দেশে বলব, সরকারি নির্দেশটা আমাদের পক্ষেই ছিল, হাইকোর্টের নির্দেশও আমাদের পক্ষে গেল। এখন থেকে প্রত্যেকের নিজের নিজের এলাকায় টিউশনরত স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নামের তালিকা তৈরি করতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × one =