বিষ্ণুপুর: এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্যের ছবি। একদিকে যেখানে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের দাবিতে ৬০০ দিনের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন, পাকা চাকরি সত্ত্বেও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলে না যাওয়ার অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার বিজয়রামপুর প্যারীমোহন হাইস্কুলের।শিক্ষকের ক্লাস না করানোর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখায় স্কুল পড়ুয়ারা। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরাও।
ছাত্রদের অভিযোগ, স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হয় না। রোল কলও রোজ হয় না। ছাত্ররা নাম লিখে দিয়ে এলে তবে খাতায় প্রেজেন্ট দেখানো হয়। এক ছাত্রের কথায়, ‘আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব। ক’দিন পর পরীক্ষা। এখনও সিলেবাস অর্ধেকও পড়ানো হয়নি। কী করব আমরা?’
এদিকে সূত্রে খবর, শ্যামল মণ্ডল নামে স্কুলের ওই শিক্ষক প্রায় ৬ মাস হতে চলল স্কুলে যান না। অথছ স্কুলে ৪৫০ জন পড়ুয়া।মাত্র ৮ জন শিক্ষক। নেই প্রধান শিক্ষক। অভিযোগ, ক্লাস নিয়মিত নেওয়া হয় না। কাগজে ছেলে মেয়েরা উপস্থিতি লিখে দিয়ে আসে বলে জানান বিক্ষোভরত অভিভবকেরা।এককথায় চরম অরাজকতার চলছে এই স্কুলে।অভিভাবকেদর অভিযোগ, এই ঘটনা টিচার ইনচার্জ গুরুদাস মণ্ডলকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। এই ঘটনায় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বাবলু মণ্ডল জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস নেন না স্যররা। সাতটা করে পিরিয়ড আছে। তিনটে কোনওদিন হয়। রোল কলও হয় না। অথচ এটা একটা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। দায়িত্বে আছেন টিআইসি গুরুদাসবাবু। প্রধান শিক্ষক নেই অনেকদিন। বিভিন্ন সময় শিক্ষকরা আসেন না। স্কুলে না এসেই খাতায় উপস্থিত হয়ে যান। এইভাবে চলছে। কিন্তু বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকরা যদি এভাবে স্কুলে না আসেন, ক্লাস না নেন, এভাবে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে তিনটে করে ক্লাস ভাবা যায়? আমিও তো স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির লোক। আমি ৬ বছর ধরে আছি এই স্কুলের সঙ্গে। আমরা তো স্যরদের খারাপ কথা বলতে পারি না। কিন্তু বারবার আমরা সতর্ক করেছি।তাতেও কাজ হয়নি।’
একই সুর স্কুলের প্রাক্তন কমিটির সেক্রেটারি গোষ্ঠবিহারী মণ্ডলের গলাতেও। তিনিও জানান, ‘পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল। ৮ জনের মতো শিক্ষক আছেন। হেড মাস্টারমশাইও নেই। পড়াশোনার মান খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সরকার শিক্ষক বাড়াক এই স্কুলে। এভাবে তো চলতে পারে না। একজন স্যর তো ৬ মাস হয়ে গেল স্কুলেই আসেন না। সেই কারণেই এই আন্দোলন।’