পরিবারের পিতৃ পুরুষদের তৃপ্ত রাখতে হাওড়ার বিভিন্ন ঘাটে চলছে তর্পণ। তর্পনের সুরক্ষায় ড্রোনের ব্যবহার প্রশাসনের

‘গোত্রে অস্মতপিতা দেব শর্মা বসুরূপৎ তৃপ্যতমিদং তিলোদকম গঙ্গা জলং’ – এই মন্ত্রেই আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ পক্ষ পূর্বপুরুষদের তর্পণ করার প্রথা প্রচলিত আছে। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কাল পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত। পুরাণ অনুযায়ী পিতৃপক্ষের সময় পূর্বপুরুষরা পৃথিবীতে নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময় তাঁরা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পিণ্ড ও জল গ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করে সন্তানের পাশে থাকেন। এই পক্ষে অন্ন ও জল দিলে পূর্বপুরুষরা শক্তি পান। যার ভিত্তিতে তিনি পরলোকে যাত্রা করতে পারেন ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ করেন।
বুধবার সূর্যোদয়ের পূর্বেই ভোর থেকে পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবী পক্ষের সূচনায় সর্বত্র শুরু হয়েছে তর্পণ। গঙ্গা তো বটেই, অন্য নদীর ঘাটেও সকাল থেকে শুরু হয়েছে তর্পণ। পিতৃ পুরুষদের তৃপ্ত করতে ভিড় বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে।
বালি থেকে শিবপুর হয়ে হাওড়ার প্রতিটি গঙ্গার ঘাটেই পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ শুরু হয়েছে। রয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তাও। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ ও রিভার ট্রাফিক পুলিশও। ঘাটে নির্দিষ্ট স্থান তর্পনের জন্য চিহ্নিত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ওই দড়ির ওপারে রয়েছে জল পুলিশের বিশেষ দলের নৌকা।
হাওড়ায় গঙ্গার ২০ টির বেশি ঘাটে তর্পণের জন্য ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিবপুরের রামকৃষ্ণপুর ঘাট, হাওড়া ময়দানের তেলকল ঘাট, সালকিয়ার বাঁধাঘাট, ঘুসুড়ির গোসাইঘাট, শিবপুরের শিবপুর ঘাট সহ একাধিক ঘাটে এদিন কয়েকশো জনসমাগম হয়। পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে চলে তর্পণ। হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি ঘাটে যেমন নজরদারি চালানো হয়, তেমনই গঙ্গায় নামানো হয় স্পিডবোট ও নৌকা। পুলিশের পাশাপাশি ঘাটগুলিতে নজরদারি চালায় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও। বেশ কয়েকটি ঘাটে চলে ড্রোনের নজরদারিও। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চলছে মাইকিংও।
হাওড়া রামকৃষ্ণপুর ঘাট সহ প্রতিটি তর্পণ ঘাটে সকাল থেকেই দেখা যাচ্ছে তর্পণ করতে আসা পূর্নার্থীদের ভিড়। হাওড়া সিটি পুলিশ এবং হাওড়া থানার পক্ষ থেকে হাওড়া রামকৃষ্ণপুর ঘাট এলাকায় চলছে কড়া নজরদারি। গঙ্গায় নজরদারি রাখছেন ম্যানেজমেন্ট এর আধিকারিকরা। এবং আকাশ পথে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে চলছে নজরদারি। ঘাটের কাছাকাছি প্রস্তুত রাখা হয়েছে মোটর চালিত বোট। এর পাশাপাশি রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
তবে তর্পন চলাকালীন গঙ্গার ঘাটে যে কোনও ধরণের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে হাওড়া জেলা প্রশাসন। যদিও মহালয়ার দিনে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের তর্পনের জন্য উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =